কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হক রিফাতের রাজনৈতিক গুরু আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু।
শুক্রবার দুপুরে সাক্কুর ব্যক্তিগত সহকারী কবির আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পরে সাক্কু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনারা জানেন আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। রাজনীতি অইল আমার ধ্যান-জ্ঞান৷ রাজনীতির বাইরে আমি কিচ্ছু চিন্তা করতাম পারি না। আমি এমপি ইলেকশান করাম। এইডাই আমার ফাইনাল কথা।’
সিটি নির্বাচনে সাক্কুর পরাজয়ের পর তার এক কর্মী ফেসবুকে লেখেন, ‘ইনশাআল্লাহ আগামী কুমিল্লা-৬ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিয় নেতা মনিরুল হক সাক্কু।’
এমন পোস্টের পরই কুমিল্লাজুড়ে আলোচনা শুরু হয়।
গত বুধবার সিটি নির্বাচনের ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে ৩৩৪ ভোটে হেরে যান দুবারের মেয়র সাক্কু। এটি তার জীবনে প্রথম পরাজয়।
বিএনপি শাসনামলে কুমিল্লা পৌরসভার শেষ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১২ ও ২০১৭ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জয় পান সাক্কু। সিটির প্রথম নির্বাচনে ৩০ হাজার ভোটে এবং দ্বিতীয় নির্বাচনে তিনি জেতেন ১১ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। এবার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিজামউদ্দিন কায়সার ও তার মধ্যে বিএনপিপন্থিদের ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার পর হেরে যান সাক্কু।
নৌকা নিয়ে রিফাত ভোট পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০টি। সাক্কু পান ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।
নৌকার প্রার্থী রিফাতের রাজনৈতিক গুরু বাহার। তার হাত ধরেই ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো কুমিল্লা সদর আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ।
গত এক যুগে কুমিল্লার রাজনীতিতে বাহারের প্রভাব স্পষ্ট। বিএনপির হলেও সাক্কুর প্রতিও তার সুদৃষ্টি ছিল বলে কুমিল্লায় প্রচার আছে।
বাহার ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আকবর হোসেনের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যান। সে সময় তিনি ভোট পান ২৮ হাজার ৫৫২টি। অন্যদিনে ধানের শীষ নিয়ে আকবর পান ৫৪ হাজার ৪৯৬ ভোট।
এর পরের দুটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ টি এম শামসুল হক বিএনপির সঙ্গে লড়াই জমাতে পারেননি। আকবর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সহজ জয় পান।
বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় আকবর হোসেনের মৃত্যু হলে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের ভোটে বিএনপি প্রার্থী করে আমিন উর রশিদ ইয়াসিনকে। আর আওয়ামী লীগ মার্কা তুলে দেয় বাহারের হাতে।
আগে আসনটি ছিল কুমিল্লা-৮। তবে ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর আসনটি হয় কুমিল্লা-৬।
এক যুগ আগের সেই নির্বাচনে বাহার ভোট পান ১ লাখ ২৬ হাজার ১৩১টি। অন্যদিকে ধানের শীষের প্রার্থী পান ১ লাখ ২ হাজার ৩০৫টি।
বাহারের হাত ধরে ওই নির্বাচনে ২০০১ সালের তুলনায় আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ে ২৩ শতাংশের বেশি।
সাক্কু বিএনপির প্রয়াত নেতা আকবর হোসেনের মামাতো ভাই। এবার সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপি তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে। তার অনুসারীরা অবশ্য মনে করছেন. এই ধরনের বহিষ্কারাদেশ বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। এই আদেশগুলো পরে তুলে নেয়া হয়।
২০১২ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জন করার পর সাক্কু দল থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক কমিটির ব্যানারে ভোটে অংশ নেন। পরে ২০১৭ সালে বিএনপি তার হাতে দলের মার্কা ধানের শীষ তুলে দেয়।