বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কুমিল্লায় জিতলেও আ.লীগের জন্য ‘অস্বস্তির বার্তা’

  •    
  • ১৭ জুন, ২০২২ ১৬:২৩

কুমিল্লায় জয় পেলেও ভোট কমে যাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনুসন্ধান ছাড়া এক দিন পরেই এ বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন। আমরা সর্ব বিশারদ নই। আপনার উপস্থাপিত প্রশ্নটি নিয়ে আমাদের গভীরভাবে স্টাডি করা প্রয়োজন। আমরা তা করব। কারণ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের অবস্থান আরও সংহত করতে হবে।’

কুমিল্লায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে চলতি শতকের দুই দশক তো বটেই আরও বেশি দশক পর নগরের ভোটে জয় পেলেও আওয়ামী লীগ খুব স্বস্তির বার্তা পেল এমন নয়।

জয় পেলেও সেখানে ক্ষমতাসীন দলের ভোট কমে গেছে অনেকটাই। অন্যদিকে বিরোধী পক্ষের ভোট বেড়েছে। বিরোধী পক্ষে ভোট ভাগাভাগির কারণেই নৌকার জয় হয়েছে, এটি স্পষ্ট।

ক্ষমতাসীন দলের দুইজন কেন্দ্রীয় নেতাও বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কুমিল্লায় ভোটের এই বার্তা তারা খতিয়ে দেখবেন।

বাংলাদেশে একটি নির্বাচন থেকে আরেকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট কমার উদাহরণ খুব একটা বেশি নয়। এটি জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে যতগুলো জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটিতেই নৌকা মার্কা নিয়ে আওয়ামী লীগ ভোট পেয়েছে আগেরবারের চেয়ে বেশি। কেবল সামগ্রিক ফলাফল নয়, প্রতি আসনের ভোট বিবেচনা করলেও দেখা যায়, প্রায় সব আসনেই নৌকার ভোট আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি হয়েছে। আর ভোট বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। খুব কমসংখ্যক আসনেই উল্টো চিত্র দেখা গেছে।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগে এমন সব আসন ছিল যেখানে আওয়ামী লীগ তৃতীয়, চতুর্থ, এমনকি পঞ্চম হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে ভোট বাড়তে বাড়তে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ও তুলে এনেছে।

কুমিল্লা শহরের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি প্রযোজ্য। ১৯৭৩ সালের পর থেকে সদর আসনে নৌকা মার্কা প্রতিটি নির্বাচনে হারতে থাকলেও ২০০৮ সালে বাজিমাত করেন আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

তবে ২০১২ সালের প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ২০১৭ সালের দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তবে প্রথম নির্বাচনের তুলনায় দ্বিতীয়বার দলের ভোট বাড়ে অনেকটাই।

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটিতে প্রথম ভোটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফজল খানকে ৩০ হাজার ৩১১ ভোটে হারান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হওয়া সাক্কু।

ওই নির্বাচনে আফজল খান পান ৩৫ হাজার ৪২৯ ভোট। সাক্কু পান ৬৫ হাজার ৭৪০ ভোট।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করে আফজলকন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে। তিনি সাক্কুর কাছে হেরে যান ১১ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। তবে তিনি তার বাবার চেয়ে ২২ হাজার ৪৩৪ ভোট বেশি পান।

ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। বুধবারের ভোটে একই মার্কা নিয়ে আরফানুল হক রিফাত ভোট পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০টি। অর্থাৎ পাঁচ বছর আগের তুলনায় নৌকায় ভোট কম পড়েছে ৭ হাজার ৫৫৩টি।

নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ছবি: নিউজবাংলা

ভোট কমার পরও আওয়ামী লীগের জয় এসেছে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভোট ভাগাভাগি হওয়ায়। এই নির্বাচন বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জন করলেও দলটির দুইজন নেতা লড়াই করেন। এর মধ্যে দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু নৌকার তুলনায় কম পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট। অন্যদিকে বিএনপিরই সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিজামউদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ২৯ হাজার ভোট।অর্থাৎ বিএনপি ঘরানার একজন প্রার্থী থাকলে আওয়ামী লীগের বড় পরাজয় হতে পারত।

বিএনপি ঘরানার ভোট হিসাব করলে দেখা যায়, গত নির্বাচনের তুলনায় তাদের ভোট বেড়েছে। ওই বছর সাক্কু ধানের শীষ নিয়ে ভোট পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৯৪৮টি। এবার টেবিল ঘড়ি মার্কায় পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭টি। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কায়সার ঘোড়া মার্কা নিয়ে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯টি।

দুই জনের ভোট যোগ করলে হয় ৭৯ হাজার ৬৬টি, যা গত নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে ১০ হাজার ১১৮টি বেশি। অথচ ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সাক্কুর ভোট বেড়েছিল ৩ হাজার ২০৮টি।

দলের নেতারা চিন্তিত

কুমিল্লায় ভোট কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা ঠিক, আমাদের প্রার্থী গতবার আরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এবার তো তারও ভোট কমে গেছে। এই যে ভোট কম পেয়েছে, এটা আমরা আমাদের গবেষণা উইংয়ের মাধ্যমে খতিয়ে দেখব।’

তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার বিষয়ের যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। সেই বিষয়টা আমরা দেখছি।’

আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, যিনি চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনুসন্ধান ছাড়া এক দিন পরেই এ বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন। আমরা সর্ববিশারদ নই। আপনার উপস্থাপিত প্রশ্নটি নিয়ে আমাদের গভীরভাবে স্টাডি করা প্রয়োজন। আমরা তা করব। কারণ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের অবস্থান আরও সংহত করতে হবে।’

নৌকা প্রতীকের বিজয়ী প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত অবশ্য ভোট কমার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘ভোটের সকালে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। যদি বৃষ্টি না হতো তাহলে আরও অনেক বেশি ভোট কাস্ট হতো। তখন বেশি ভোট পেতাম।’

প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর সম্মিলিত ভোট আগের নির্বাচনের চেয়ে বাড়ার বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পুরো প্রশ্নটি না শুনেই ফোন কেটে দেন রিফাত।

ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষায় ভোটাররা। ছবি: নিউজবাংলা

আওয়ামী লীগের ভোট ক্রমেই বেড়েছে

নির্বাচনে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে দেখা দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ভোটের হার বেড়েছে।

সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরুদ্ধ পরিবেশে আওয়ামী লীগ ভোট পায় ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।

১৯৮৬ সালে আরেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট বেড়ে হয় ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ।

এরশাদ আমলে ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বর্তমানের ক্ষমতাসীন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে নৌকার ভোট আরও বাড়ে। ওই নির্বাচনে মোট ভোটের ৩০ দশমিক ০১ শতাংশ ভোট পায় নৌকা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা আওয়ামী লীগ পরের নির্বাচনও বর্জন করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই নির্বাচনের কিছুদিন পর ১২ জুন হয় আরেকটি ভোট। ওই নির্বাচনে জিতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে দলটি।

সেই নির্বাচনে নৌকায় ভোট এক লাফে বেড়ে যায় ৭ শতাংশের বেশি। সেই নির্বাচনে ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ ভোটের পাশাপাশি ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জেতে দলটি।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির একাংশ এবং ইসলামী ঐক্যজোটের সম্মিলিত শক্তির কাছে আসনের হিসাবে ভরাডুবি হয় আওয়ামী লীগের। আসন নেমে আসে ৬২টিতে।

তবে আগের নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ ভোট বাড়াতে সক্ষম হয় দলটি। সেই নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ পড়ে নৌকার বাক্সে।

২০০৬ সালের শেষে নবম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে মেনে না নিয়ে আন্দোলনে যায় আওয়ামী লীগ। কে এম হাসান এককালে ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। আন্দোলনের মুখে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন না জানানোর পর এই সরকারের প্রধান হন বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ।

ওই সরকার ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ দিলেও ভোট হয়নি। ১১ দিন আগে জরুরি অবস্থা জারি হলে প্রায় দুই বছর দেশে সাংবিধানিক শাসন থাকে স্থগিত।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে আবার লাফ দেয় আওয়ামী লীগের ভোট। ওই বছর নৌকায় ভোট পড়ে ৪৯ শতাংশ। আর এই ভোট বাড়ায় আসন সংখ্যা দেয় লাফ। ৬২ আসন থেকে বেড়ে হয় ২৩০টি।

এর পরের দুটি নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে এক কথায় ওয়াকওভার পায় আওয়ামী লীগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সেই নির্বাচনে না গিয়ে সহিংস আন্দোলনে যায়। এর মধ্যে দেড় শতাধিক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নির্ধারণ হয় যাদের সিংহভাগেই জয় পান নৌকার প্রার্থী।

বাকি যে আসনগুলোতে ভোট হয়, সেগুলোতে যত ভোট পড়েছে, তার মধ্যে ৭৯ দশমিক ১৪ শতাংশ ভোট পড়ে নৌকার বাক্সে।২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন নিয়েও নানা বিতর্ক আছে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট হয় ৭৬ শতাংশের কিছু বেশি।

এ বিভাগের আরো খবর