টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের গোবিন্দগঞ্জ-দিঘলী এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে সারা দেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বন্যার পানিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-দিঘলী এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সেখান দিয়ে কোনো দূরপাল্লার গাড়ি আপাতত যেতে পারবে না। তবে ছোট যানবাহন, মোটরসাইকেল চলতে পারবে।’
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি আর উজানের বৃষ্টিপাত দুটোই সুনামগঞ্জের পরিস্থিতি খারাপ করে দিচ্ছে। সুরমা নদীর পানি এখন ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। রাতে তা আরও বাড়তে পারে। বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে।’
পৌর শহরের মরাটিলা এলাকার তন্ময় সেন বলেন, ‘এতো দ্রুত পানি বাড়তে কখনও দেখি নাই। গতকাল সকালে বাসা থেকে বের হবার সময় রাস্তায় একটুও পানি ছিল না। বিকালে এসে দেখি হাঁটু পানি। এখন কোমর পানি। শহরের হাতেগোনা কিছু জায়গা ছাড়া প্রত্যেকটা পাড়া-মহল্লায় পানি। এই ধারায় পানি বাড়লে ভয়ানক অবস্থা হতে চলেছে।’
আরপিন নগর এলাকার ইমামুল হোসেন বলেন, ‘পানি তো বাড়ার উপরেই আছে। এটা দেখে মনে হচ্ছে ২০০৪ সালের বন্যার কথা।’
নবীনগর এলাকার রিতা বেগম জানান, এমন বন্যা আগে দেখেননি।
২৫৮ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ১২ উপজেলা ২ শতাধিক বিদ্যালয়। সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পানি বিদ্যালয়ে ঢুকে গেলে পাঠদান স্থগিত করে এলাকাবাসীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য উপজেলা অফিসারদের নির্দেশনা দেয়া আছে। তারা তাদের প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের ২৫৮টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে।’
ত্রাণ নিয়ে নৌকায় মেয়র
শহরের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে নৌকায় নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন ডিসি জাহাঙ্গীর হোসেন ও পৌর মেয়র নাদের বখত।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পৌর শহরের তেঘরিয়া বড়পাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেন তারা। বন্যার্তদের জন্য জরুরি সেবা দিতে কন্ট্রোল রুম ও পৌর কাউন্সিলরদের সজাগ থাকার নির্দেশনাও দিয়েছেন।
ডিসি বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের মধ্যে শুকনা খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে। সব ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া আছে যেন তারা বন্যার্তদের পাশে থাকেন এবং যে কোনো প্রয়োজনের দ্রুত ব্যবস্থা নেন।’
সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘দ্বিতীয় দফা বন্যায় সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা তাদের শুকনা খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হচ্ছে। ত্রাণের কোনো অভাব নেই। যথেষ্ট পরিমাণ খাবার আমাদের কাছে রয়েছে।’