বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাষাঢ়া হামলার বিচার দেখতে পারব তো: শামীম ওসমান

  •    
  • ১৬ জুন, ২০২২ ২০:৪৬

‘আমি অনেক চেষ্টা করেছি, চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। আমি ধীরভাবে বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আইনের মাধ্যমে সবকিছু করছে। এই বিচারটাও হবে। কারণ স্বজন হারানোর ব্যথা ওনার মতো আর কেউ বুঝবে না।’

‘বুকটা ভরা কষ্ট। ব্যথাও আছে। বেদনাও আছে কিন্তু ধীরভাবে বিশ্বাস করি, যারা বোমা হামলা করেছে তাদের বিচারটা এখানেই হবে। তবে একটা জিনিসিই মনের ভেতর সময় লাগে, বিচারটা দেখে যেতে পারব তো! কারণ, বয়স তো আস্তে আস্তে বাড়ছে।’নারায়ণগঞ্জের বোমা হামলার ২১ বছর পূর্তির দিন নিউজবাংলাকে এই প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।২০০১ সালের ১৬ জুন নগরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলায় নিহত হন ২০ জন। শামীম ওসমানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আহত হন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা লীগের শতাধিক নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন।

সেই দিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে শামীম ওসমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বেঁচে আছি। কিন্তু যারা নিহত হয়েছে, সেই চেহারাগুলো এখনও মনে পড়ে। তারা তো দুনিয়া থেকে চলে গেছে।তাদের পরিবার আছে। আমি ওদের চোখের দিকে তাকাতে পারি না।

‘আমার কাছে অপরাধবোধ লাগে। আমাকে উদ্দেশ্য করেই তো বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। হয়তোবা আমার কারণেই এতগুলো মানুষ এই দুনিয়া থেকে চলে গেল। আজকে আমার বলার কিছু নাই।’

যারা সেদিন নিহত হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন। তাদের পরিবারের কাছে হাত জোড় করে মাফ চান শামীম ওসমান। বলেন, ‘বিচারটা যদি হতো তাহলে অন্ততপক্ষে এ পরিবারগুলো কিছুটা শান্তি পেত।’২১ বছরেও কেন এই মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মতো কোনো উত্তর তার কাছে নেই জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি অনেক চেষ্টা করেছি, চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। আমি ধীরভাবে বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আইনের মাধ্যমে সবকিছু করছে। এই বিচারটাও হবে। কারণ স্বজন হারানোর ব্যথা ওনার মতো আর কেউ বুঝবে না।’বোমা হামলা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন শামীম ওসমান। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে তার আক্ষেপ আছে। এ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বোমা হামলা মামলার অন্যতম আসামি দুই ভাই মোরছালিন ও মুত্তাকিম ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছে অনেক আগেই। তারা গ্রেপ্তারের পর সেখানে কয়েকটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছে। তারা একটি পত্রিকায় বলেছিল, শামীম ওসমান প্রাইমারি টার্গেট, শেখ হাসিনা পার্মানেন্ট টার্গেট এবং সেটা কিন্তু প্রমাণ করেছে ২১ আগস্টের ঘটনায়।’

ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকার কথা তুলে ধরে এই দুই আসামিকে ফিরিয়ে দিতে দেশটির প্রতি অনুরোধ জানান শামীম। বলেন, ‘আমরা ভারতকে অনেক আসামি তুলে দিয়েছি। তাদের কাছ থেকে যদি মুত্তাকিন ও মুরসালিনকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়, তাহলে এ ঘটনার পেছনে কোন কোন বড় শক্তি, কোন কোন বড় দল বা নেতানেত্রী জড়িত ছিলেন, তা বেরিয়ে আসবে।’বোমা হামলায় নিহত ও আহতের স্বজনরাও বিচারের অপেক্ষায়। তাদের মনেও সংশয় বিচার দেখে যেতে পারবেন কি না।হামলায় নিহত নিধুরাম বিশ্বাসের স্ত্রী বলেন, ‘এতগুলা বছর হইয়া গেল, আমরা কীভাবে আছি, কীভাবে চলতাছে কেউ জানে না। কেউ আমাগো খোঁজখবর নেয় না। আমরা কার কাছে যামু, কার কাছে আমাগো দুঃখের কথা কমু? এত বছর হইল, মামলার বিচারটাও শেষ হইল না। বিচার দেইখা যাইতে পারমু কি না হেইডাও জানি না।’দুই পা হারানো পঙ্গু রতন দাস বলেন, ‘কম সময় তো পার হইল না। আর কত সময় লাগব বিচার শেষ করতে? সরকারের কাছে আমার আবেদন থাকবে যেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।’বিচার কত দূর

বোমা হামলার পরদিনই বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। তবে তা মানেননি খোকন।

পরে তদন্ত শেষে ২০০৩ সালে বিস্ফোরক মামলায় ২৭ জনকে ও ২০১৪ সালে হত্যা মামলায় ২২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এর পর থেকে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।খোকন সাহা বলেন, ‘সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে কিন্তু সাক্ষীরা আমাদের সহযোগিতা করেন না। তারা আদালতে হাজির হন না। তারা না আসার কারণে মামলাটি শুধু বছরের পর বছর পার হচ্ছে।

‘আমরা এ মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আদালত আমাদের ন্যায্য রায় দেবে। এ রায় শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীই নয়, পুরো জাতি দেখতে চায়।মামলার রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি বুলবুল আহাম্মদ জানান, দুটি মামলায় এ পর্যন্ত ১৭ জন করে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যারা সাক্ষ্য দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে আদালত সমন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

আসামি কারা

এই মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কমিশনার আরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১০ জন আসামি আছেন।

আসামিদের মধ্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর বোমা হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। কারাগারে রয়েছেন শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল ও আবদুস সালাম পিন্টু। ভারতে গ্রেপ্তার রয়েছেন দুই ভাই আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিম।

জামিনে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু ও ওবায়দুল হক। বাকি আসামিরা পলাতক।

এ বিভাগের আরো খবর