বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংবিধানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে শতাধিক ভুল!

  •    
  • ১৬ জুন, ২০২২ ২০:১২

৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘রিকশা, ঘোড়াগাড়ি চলবে, রেল চলবে।’ অথচ সংবিধানে দেয়া হয়েছে ‘রিকশা, গরুর গাড়ি, রেল চলবে।’ এ রকম শতাধিক ভুল শনাক্ত করেছে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।  

সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ অন্তর্ভুক্ত আছে। তবে সেখানে শতাধিক জায়গায় ‘ভুল, অসম্পূর্ণতা ও অমিল খুঁজে পেয়েছে’ উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির দেয়া প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল হক, তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সেলিম আজাদ। অন্যদিকে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল আলিম মিয়া জুয়েল ও সুবীর নন্দী দাস।

পরে রিটকারী আইনজীবী এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ঠিক করতে প্রার্থনা করলে আদালত ঈদের ছুটির পরে দিন ঠিক হবে জানিয়ে মুলতবি করেন।

আদালতের নির্দেশে তথ্য মন্ত্রণালয়ের গঠন করা উচ্চ পর্যায়ের কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোট ১০৯টি ‘ভুল, অসম্পূর্ণতা ও অমিল’ চিহ্নিত করেছে তারা।

প্রতিবেদনে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি নিশ্চিত করতে গিয়ে মূল ভাষণের সঙ্গে সংবিধানে মুদ্রিত ভাষণের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

এ বিষয়ে রিটকারীদের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংবিধানের মতো রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে শতাধিক ভুল বা অসম্পূর্ণতা রয়েছে। এটি কি সাধারণ বিষয়? পরবর্তী যেদিন শুনানি হবে, তখন আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে নির্দেশনা চাইব।’

পাঠ্য পুস্তকের ভুলভ্রান্তি নিয়ে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদন পড়ার পর রাজবাড়ীর কাশেদ আলী অষ্টম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ গদ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে ৫০টির বেশি ‘ভুল’ খুঁজে পান।

এরপর ভুলগুলো সংশোধনের জন্য ওই বছর ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দপ্তরে আবেদন করেন। তাতে সাড়া না পেয়ে ২০২০ সালের ৫ মার্চ হাইকোর্টে এই রিট করেন।

স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ওই ভাষণ সংবিধান ও পাঠ্যপুস্তকে ‘ভুলভাবে অন্তর্ভুক্ত করার’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিট আবেদনে। পরে ওই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০২০ সালের ১০ মার্চ আদালত রুলসহ আদেশ দেয় হাইকোর্ট।

আদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘ভুলভাবে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করতে বলা হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তখনকার রেসকোর্স (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণের সময় সমাবেশে উপস্থিত থেকে যারা ভাষণটি সরাসরি শুনেছেন, তাদের কাউকে রেখে কমিটি গঠন করতে বলা হয়।

পরে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ টেলিভিশনের তখনকার মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদকে সভাপতি ও প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদকে সদস্যসচিব করে ‘৭ মার্চের ভাষণ নিশ্চিতকরণ কমিটি’ নামে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। এতে সদস্য হিসেবে রাখা হয় বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান (মৃত), ইতিহাসবিদ-লেখক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক উপপরিচালক আশফাকুর রহমান খান, বাংলাদেশ বেতারের তখনকার মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদার এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স ম গোলাম কিবরিয়াকে।

মন্ত্রণালয়ের গঠিত এই কমিটি যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা ভুল-বিভ্রান্তি-অস্পূর্ণতা চিহ্নিত করে ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। পরে এ প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করার জন্য গত ৩১ মার্চ অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠায়। এর দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

রিটকারী আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস জানান, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘রিকশা, ঘোড়াগাড়ি চলবে, রেল চলবে।’ অথচ সংবিধানে দেয়া হয়েছে ‘রিকশা, গরুর গাড়ি, রেল চলবে।’

এ ছাড়া ভাষণের ৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে বলা হয়েছে, ‘জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর’, কিন্তু সংবিধানের তফসিলে লেখা হয়েছে ‘জনগণের প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।’

ভাষণের ১২ মিনিট ১১ সেকেন্ডে বলা হয়েছে, ‘শোনেন মনে রাখবেন শত্রু বাহিনী ঢুকেছে।’ অথচ লেখা হয়েছে ‘শুনুন মনে রাখবেন শত্রু বাহিনী ঢুকেছে।

মূল ভাষণে ছিল: ‘আমরা বললাম’, অথচ লেখা হয়েছে ‘আমি বললাম’। ‘জনাব ভুট্টো সাহেবের’ জায়গায় লেখা হয়েছে ‘ভুট্টো সাহেব’। এ ছাড়া অনেক জায়গায় বক্তব্য অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি।

এমন করে শতাধিক জায়গায় ভুল বা অসম্পূর্ণ লেখা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর