ভোট শেষ, জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশের আর দরকার নেই। এই পরিস্থিতি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তিন প্রধান প্রার্থীর ভোটের পরের দিনটি কাটল তিন ভাবে।
বিজয়ী প্রার্থী নৌকা মার্কার আরফানুল হক রিফাতের সময় কেটেছে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে।
গত দুইবারের বিজয়ী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কুর সময় কেটেছে নেতাকর্মীদের সান্ত্বনা শুনে।
অন্য প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সার খানিকটা হতাশ। তিনি ভেবেছিলেন আরও ভোট পাবেন। তাকে কথা দিয়েও অনেকে কথা রাখেনি- এমন আক্ষেপের কথা বলেছেন।
গত রাতে ফল প্রকাশের পর পরই খণ্ড খণ্ড মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। সেগুলো গিয়ে থামে নগরীর মনোহরপুরে রিফাতের বাসার সামনে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে ঘুমাতে যান রিফাত।
সকাল ৯টায় ঘুম থেকে ওঠেন রিফাত। জানালেন, দারুণ ঘুম হয়েছে। বলেন, ‘এমনিতে ঘুম থেকে উঠি সকালে। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। এই কয়দিন নির্বাচন নিয়ে ছিলাম ব্যস্ত। হেঁটে বেড়িয়েছি নগরীর অলিগলি। রাতে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যাই। বহুদিন পর একটু ভালো ঘুম হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা নৌকার প্রতি আস্থা রেখেছে। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, সিটি করপোরেশনের দুর্নীতি বন্ধ করব। দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করব। এই সিটি করপোরেশন হবে সবার। দলীয় কার্যালয় বানাব না।’
দুপুরে হাসপাতালে থাকা বোনকে দেখতে যাওয়ার পর বিকেলে নগর উদ্যানের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রিফাত। সঙ্গে ছিলেন তার রাজনৈতিক গুরু সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
সাক্কু বিশ্রামে
হ্যাটট্রিক করার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন সাক্কু। কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হেরে গেলেন ৩৪৩ ভোটে। গত রাত সাড়ে ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে ফল ঘোষণার পর তা প্রত্যাখ্যান করে ফেরেন ঘরে।
আজ (বৃহস্পতিবার) দিনটি কীভাবে শুরু হলো- জানতে চাইলে সাক্কু বলেন, ‘আমি চেষ্টা করি, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ি। আজও ভোররাতে ঘুমেততন উঠছি। নামাজ পইড়া একটু ঘুমাইছি। নাশতা করছি। এরপর থাইক্কা আমার লোকজন আওন শুরু করছে। তারা আমারে সান্ত্বনা দেয়। হগ্গলে দেখছে আমারে ফেইল করাইছে।’
আপনি কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবেন কি না- এমন প্রশ্নে সাক্কু বলেন, ‘আমি চিন্তা করতাছি কী করণ যায়। আমনেরারে জানায়াম কী করমু।’
নিজের পরিশ্রমের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি হাঁটছি। পাওডিত ফোসকা পড়ছে। আমি আইজ বাড়িত আছি।’
কায়সার হতাশ
এই নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে থেকেও জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন মূলত ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সার, যিনি প্রথমবারের মতো ভোটে লড়েন।
কায়সার কত ভোট পাবেন, সেটি নিয়েই ছিল তুমুল আলোচনা। তার বাক্সে ২৯ হাজারের বেশি ভোট শেষ পর্যন্ত নগরবাসীকে অবাকই করেছে।
কায়সার বলেন, ‘সকালে ফজর নামাজ আদায় করেছি। আবার শুয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম। পরে ৯ টায় ঘুম থেকে উঠেছি। নাশতা করেছি। নেতাকর্মীরা আসতাছে। সাংবাদিকরা আসছে।’
পরাজয়ের কারণ কী মনে করছেন- এমন প্রশ্নে কায়সার বলেন, ‘সবাই নৌকা ঠেকাও, বাহার ঠেকাও বলে বলে মনিরুল হক সাক্কুকে ভোট দিছে। এটা আমার পরাজয়ের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া কালো টাকার কাছে হেরেছি আমি।’
ভোটের ফলে আপ্লুত বলেও জানান কায়সার। বলেন, ‘আমি আরও একটা কথা বলতে চাই, আমার প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা দেখেছি আমি মুগ্ধ। সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।’
ভোট কেমন হয়েছে এমন প্রশ্নে কায়সার বলেন, ‘দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।’
বিচ্ছিন্ন ঘটনা কী ছিল, এমন প্রশ্নে কায়সার বলেন, ‘ইভিএমের ধীরগতি, হাতের ছাপ না মেলা এগুলোই।’