কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে কারচুপি হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, তারা যে কারণে বর্তমান সরকার ও কমিশনের অধীনে ভোটে যাচ্ছেন না, সেটি এখন স্পষ্ট হয়েছে।
কুমিল্লায় আলোচিত ভোটের পর দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি নেতা।
আগের দিন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু প্রথমবারের মতো ভোটে হারেন। ২০১২ সালে ৩০ হাজার, ২০১৭ সালে ১১ হাজার ভোটে জয়ের পর এবার তিনি হেরেছেন ৩৪৩ ভোটে।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসনে জিতলেও মহানগরের ভোটে বারবার পিছিয়ে ছিল আওয়ামী লীগ। এবার দলটি ভোটে জয় পেয়েছে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগাভাগিতে।
বিএনপি ভোট বর্জন করলেও সাক্কু এবং স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগী নেতা নিজামউদ্দিন কায়সারের পেছনে ছিল দলটির নেতা-কর্মী সমর্থকরাই।
সাক্কু ৪৯ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন আর কায়সার পেয়েছেন ২৯ হাজারের বেশি। দুই ভোট এক বাক্সে পড়লে আওয়ামী লীগের আরও একটি পরাজয় হতে পারত।
এই ভোটের ফল ঘোষণার সময় ছিল টানটান উত্তেজনা। দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার আরফানুল হক রিফাত ও সাক্কুর মধ্যে ব্যবধান এতটাই কম ছিল যে, একটি বা দুটি কেন্দ্রের ফল আসার পরই একজন এগিয়ে এবং অপরজন পিছিয়ে যাচ্ছিলেন।
১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে এক শটি কেন্দ্রের ফলে সাক্কু ছয় শতাধিক ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরের পাঁচটি কেন্দ্রের ফলাফলে পিছিয়ে পড়েন তিনি।
এই ফলাফল ঘোষণার আগে ফল ঘোষণার কেন্দ্রে হাঙামা হয়। সেখানে সাক্কু অবস্থান করছিলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও স্লোগান দিচ্ছিলেন। হাঙামার কারণে মিনিট পাঁচেক ফল ঘোষণা বন্ধ ছিল।
দিনভর ভোট নিয়ে কোনো অভিযোগ না করলেও সাক্কু দাবি করেন, শেষ মুহূর্তে উপর মহলের ফোনে ফল পাল্টে দেয়া হয়েছে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেছেন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কেন্দ্র থেকে যে ফলাফল দিয়েছেন, সেটি পরিবর্তনের এখতিয়ার কারও নেই।
ফখরুল বলেন, ‘কুমিল্লার নির্বাচন আপনারা নিজেরাই দেখেছেন কী হয়েছে। আমরা বহু আগে থেকেই জানি কী হবে। এ জন্য আমরা কোনো নির্বাচনে যাচ্ছি না।
‘এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানেই হচ্ছে তাদের বৈধতা দেয়া। আমি মনে করি আমাদের বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সবকিছু যদি আমরা রক্ষা করতে চাই তাহলে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
বর্তমান সরকারের আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই বলেও মনে করেন ফখরুল। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হরণ করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হরণ করেছে, ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করেছে। আর বিএনপি সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছে।‘আমাদের মূল যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যটি হচ্ছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সমস্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। সব শ্রেনির, সব পেশার মানুষকে জাগিয়ে তুলে গণতন্ত্রের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে হবে।’
বিএনপি আন্দোলনে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই অবস্থার পরিবর্ত ঘটাব, দেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনব, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনব। এই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি এবং আমরা বিশ্বাস করি সফল হবে।’
সাংবাদিকদের সংগঠন বিএফইউজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।