বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্যাতনের অভিযোগ তুললেন মিজান, অস্বীকার করছে পুলিশ

  •    
  • ১৬ জুন, ২০২২ ১৫:৩১

মিজানুর রহমান মিজানের অভিযোগ, পুলিশের জিম্মায় থাকার সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ট থানা ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবি, মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য সঠিক হলেও তাকে নির্যাতন করা হয়নি। তাকে নিয়ে যাওয়ার পরের কয়েক ঘণ্টা তথ্য গোপনের অভিযোগও স্বীকার করছে না কর্তৃপক্ষ।

রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা ও অধিকারকর্মী মিজানুর রহমান মিজানকে গত বৃহস্পতিবার তুলে নেয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।

পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানোর পরের কয়েক ঘণ্টায় বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের পরিষ্কার কোনো তথ্য দেয়নি শ্যামপুর থানা পুলিশ। মিজানকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নেয়া হতে পারে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাননি সংবাদকর্মীরা।

এরপর বিকেল ৪টার দিকে পরিবারের জিম্মায় মিজানুরকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। পরে তাকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।’

জনস্বার্থ ও পরিবেশসংশ্লিষ্ট নাগরিক আন্দোলনে যুক্ত মিজানুর রহমান বিভিন্ন সময়ে জনঘনিষ্ঠ আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে আলোচিত। তাকে পুলিশ ‘তুলে নেয়ার’ দুই দিন আগে মঙ্গলবার জুরাইন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন পুলিশের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করার জেরে তাকে প্রথমে থানায় এবং পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান।

পুলিশের জিম্মায় থাকার সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট থানা ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবি, মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য সঠিক হলেও তাকে নির্যাতন করা হয়নি। তাকে নিয়ে যাওয়ার পরের কয়েক ঘণ্টা তথ্য গোপনের অভিযোগও স্বীকার করছে না কর্তৃপক্ষ।

৯ জুন বিকেল ৪টার দিকে পরিবারের জিম্মায় মিজানুরকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেয়া হয়

মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জুরাইন রেলগেটসংলগ্ন বিক্রমপুর প্লাজা মার্কেটের ভেতর শ্যামপুর থানার পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন আমার কাছে এসে নাম-পরিচয় জানতে চান। পরিচয় দেয়ার পর তারা বলেন, আমার সঙ্গে তাদের এডিসি কথা বলতে চান, থানায় যেতে হবে।

‘এর মধ্যে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য উপস্থিত হন। আমাকে ঘিরে ধরে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। এর মধ্যে আমি ফোন করে আমার এক বন্ধুকে জানাই যে আমাকে শ্যামপুর থানায় নেয়া হচ্ছে।’

গাড়িতে তোলার পর থেকেই পুলিশ খারাপ আচরণ শুরু করে বলে অভিযোগ মিজানের। এ সময় তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়।

এরপর আমাকে চোখ বেঁধে পাঠানো হয় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। সেখানে ডিবির জুনিয়র অফিসাররা খারাপ ব্যবহার করলেও সিনিয়র একজন অফিসার স্বাভাবিক ও ভদ্রভাবে কথা বলেন।

মিজান বলেন, ‘এরপর শ্যামপুর থানার ওসির রুমে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে ওসির চেয়ারে শ্যামপুর জোনের এডিসি কাজী রোমানা নাসরিন বসা ছিলেন৷ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এ সময় রুমে উপস্থিত ছিলেন। ওখানে তারা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। ধমক ও গালিগালাজ করে কথা বলেন।

‘আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি মিডিয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির কথা কেন বলেছি। এ সময় আমাকে ওই এডিসির নির্দেশে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনাটি আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। থানায় থাকার সময়ে আমাকে বিএনপির লোক, পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করি- এমন সব কটূক্তিও করেছেন পুলিশ সদস্যরা।’

মিজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরপর আমাকে চোখ বেঁধে পাঠানো হয় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। সেখানে ডিবির জুনিয়র অফিসাররা খারাপ ব্যবহার করলেও সিনিয়র একজন অফিসার স্বাভাবিক ও ভদ্রভাবে কথা বলেন।

‘তবে আলোচনার একপর্যায়ে ওই সিনিয়র কর্মকর্তা আমাকে উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরেন আপনি একটা মামলা খেলেন। মামলা তো নানাভাবেই দেয়া যায়। ধরেন আপনাকে কেউ দুই পিস, পাঁচ পিস, ১০ পিস ইয়াবা পকেটে ঢুকায়ে দিয়ে মামলা দিয়ে দিল।

‘২০ বছর পর মামলার রায় হলো। আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেন। যারা আপনার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে তারাও জানে আপনি নির্দোষ, কিন্তু এই ২০ বছরের জার্নি আপনি চিন্তা করেন তো? এসব বলে তিনি আমার পরিবারের কথা মাথায় রেখে সতর্ক থেকে চলা ও দায়িত্বের সঙ্গে সমালোচনা করার পরামর্শ দেন।’

প্রায় ৬ ঘণ্টা পর পরিবারের জিম্মায় ও আমার মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়। তবে ডিবি কর্মকর্তারা এসব বিষয় গোপন রাখার পরামর্শ দেন।

এই অধিকারকর্মী বলেন, ‘এরপর বিকেলে আমার পরিবারকে আমার অবস্থান সম্পর্কে জানানো হয় এবং আমার স্ত্রী ও কন্যা গিয়ে আমাকে নিয়ে আসে। এর আগে আমাকে আটকের কথা পরিবারের কাছে অস্বীকার করে শ্যামপুর থানা পুলিশ। প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা তারা আমার খোঁজ না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠায় ছিল।

‘প্রায় ৬ ঘণ্টা পর পরিবারের জিম্মায় ও আমার মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়। তবে ডিবি কর্মকর্তারা এসব বিষয় গোপন রাখার পরামর্শ দেন।’

এই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি মিজানুর রহমান।

পুলিশের গাড়িতে উঠে মিজানুর প্রথম ফোন করেছিলেন তার বন্ধু মাহতাব উদ্দিন আহমেদকে। মাহতাব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন বেলা ১১টার দিকে মিজান আমাকে ফোন করে বলেন তাকে শ্যামপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মাঝে পাশ থেকে কেউ তাকে ধমক দিয়ে বলছিলেন কেন ফোন দিয়েছেন, এরপর তার নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়।

‘দুপুর ১২টার দিকে আমি প্রথম শ্যামপুর থানায় গিয়ে মিজানের খোঁজ করি। তখন থানার গেট থেকে বলা হয় ভেতরে যাওয়া যাবে না। গেটের পুলিশ সদস্যরা জানান টাক মাথা ও কিছুটা বয়স্ক একজনকে নিয়ে আসা হয়েছে, তার নাম মিজান কি না তাদের জানা নেই। আরও কিছু সময় পর মিজানের স্ত্রী থানায় এলে সিভিল ড্রেসে থাকা থানার একজন কর্মকর্তা তাকে জানান, মিজানকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।’

তাকে আমরা মারধর কেন করব, তিনি কি রিমান্ডের আসামি নাকি! এই অভিযোগ সত্যি নয়। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মাহতাব বলেন, ‘এরপর আমরা ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে রিসিপশনে মিজানের বিষয়ে জানতে চাই। সেখানে বলা হয়, এখানে কোনো আসামি নিয়ে আসা হলে রিসিপশনে কোনো এন্ট্রি হয় না, শুধু নির্দিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তারা আসামির তথ্য দিতে পারেন। আমরা সেখানে অপেক্ষারত অবস্থায় সাংবাদিক ভাইয়েরা টেলিফোনে আমাদের জানান, মিজান ডিবি কার্যালয়ে আছেন এবং তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। এর কিছুক্ষণ পর ডিবি থেকে ফোন করে মিজানের স্ত্রী এবং মেয়েকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।’

মিজানের তোলা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার কাজী রোমানা নাসরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাকে ডিবি নিয়ে গিয়েছিল, আমরা শুধু তার আগে কিছুটা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। আমরা জানতে চেয়েছিলাম তিনি মিডিয়ায় বলেছেন ফুটপাত থেকে পুলিশ চাঁদাবাজি করে- এই অভিযোগ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেন জানালেন না। আমরা তাকে বুঝিয়ে বলেছি, অভিযোগগুলো আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এরপর তাকে ডিবিতে নিয়ে যাওয়া হয়।’

মিজানকে গালিগালাজ ও লাঠি দিয়ে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে রোমানা নাসরিন বলেন, ‘তাকে আমরা মারধর কেন করব, তিনি কি রিমান্ডের আসামি নাকি! এই অভিযোগ সত্যি নয়। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

মিজানের বিষয়ে থানা থেকে তথ্য না দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন সাংবাদিকরা জানতে চাইছিলেন মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না? তার উত্তরে আমি বলেছি না আমরা তাকে গ্রেপ্তার করিনি। একই সঙ্গে এটাও বলেছি- বাহিনীর একাধিক ইউনিট তাকে খুঁজছে, ডিবিতে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।

‘যেহেতু পুলিশ বক্সে হামলার মামলাটি ডিবি তদন্ত করছিল, তাই ডিবি তাকে অ্যারেস্ট দেখাবে নাকি ছেড়ে দেবে, সে বিষয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। তবুও আমরা গাইড করেছি যে ডিবিতে খবর নেন। এখানে আমরা কোনো তথ্য গোপন করিনি।’

সাংবাদিকরা যখন আমাকে ফোন করেছেন আমি তো সবাইকেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন কেন উঠছে সেটা বুঝতে পারছি না।

থানায় মিজানকে মারধরের অভিযোগও অস্বীকার করেন ওসি।

একই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিজানুর রহমানকে আমরা এনেছিলাম, কারণ পুলিশ বক্সে হামলার মামলাটি আমরা তদন্ত করছিলাম। মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার ছিল। আমরা তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেই তার পরিবারকে ডেকে এনে তাদের জিম্মায় দিয়ে দিয়েছি।

‘এমন তো না যে আমরা দিনের পর দিন আটকে রেখেছি, তার সঙ্গে আমাদের ঘণ্টা দেড়েক কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যেই তার পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। এখানে খুব বেশি সময় নেয়া হয়েছে বলে তো আমার মনে হয় না। আমরা যদি গ্রেপ্তার দেখাতাম, সেটাও পরিবারকে জানিয়ে দিতাম।

মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য নিয়ে ‘জটিলতা বা লুকোচুরি’র মতো কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেন এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা যখন আমাকে ফোন করেছেন আমি তো সবাইকেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন কেন উঠছে সেটা বুঝতে পারছি না।‘

মিজানকে মামলার ভীতি দেখানোসহ কর্মকর্তাদের রূঢ় আচরণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশপ্রধান বলেন, ‘এমন কিছুই তার সঙ্গে করা হয়নি। তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে, এমনকি আমরা তাকে দুপুরের খাবার দিয়েও আপ্যায়ন করেছি। তারপর তার পরিবারের জিম্মায় দিয়েছি।’

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হলে তার পরিবারকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। এ ঘটনায় তাকে নিয়ে আসার সময় তিনি যখন পরিবারকে ফোন দিয়েছেন তাতে পুলিশের বাধা দেয়া উচিত হয়নি। তবে পরবর্তীতে পুলিশের পক্ষ থেকেই তার পরিবারকে জানানো হয়েছে। তাই এখানে নিয়ম ভাঙার মতো কিছু হয়নি।

‘আর জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারধর, খারাপ আচরণ কিংবা হুমকি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এখন প্রতিটি থানার ওসির রুম থেকে ধরে হাজতখানা পর্যন্ত সব জায়গাই সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত।’

এ বিভাগের আরো খবর