দুই দিনের বৃষ্টি আর উজানের ঢলে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। তা অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করে পানি লোকালয়ে ঢুকতে পারে। এদিকে পানি বাড়তে থাকায় ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি সীমা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাউনিয়া পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার দেড় সেন্টিমিটার নিচে।’
আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিনবিনা চরের আব্দুল বারি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানি এখনো বাড়িতে ওঠে নাই। কিন্তু উঠতে পারে। নদীর পাশোত যে জমি আছে সেগুলোতে উঠছে। বছর বছর আমাদের ভাগ্য নিয়ে খেলা হয়। নদী যদি মনে করে এবার ভাঙবে না তাহলে কপাল ভালো, নইলে যে ভিটে আছে এবার সোউক শ্যাষ হইবে।’একই এলাকার বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান কয়েক দিন ধরে কইতেছে বন্যা হইতে পারে। রেডি থাকেন, আমরাও রেডি আছি। রেডি বলতে কী বাড়ি-ঘর হয়ো অন্য জাহাত নিয়ে যাবার লাগবে?’
লক্ষ্মিটারী চরের আসাদ বলেন, ‘ভাঙতে ভাঙতে খালি ভিটে আছে। এবার কী হবে জানি না। আবাদ সুবেদ যে আচিল, সেইলে আগোতে তুলছি। এলা খালি বাড়ি ভাঙি না গেলে হয়।’
গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চরবাসীকে আগাম জানিয়ে দিচ্ছি। বন্যার সম্ভাবনা আছে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছি।’
একই উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবাদুর রউফ বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি মানে আমার ইউনিয়নে ভাঙন বৃদ্ধি। বিশেষ করে পশ্চিম বিনবিনা চরের মানুষের জন্য খুব কষ্ট হয়। তারা ভাঙনরোধে বাঁধও দিয়েছে। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করব, ভাঙনরোধে যেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়।’
রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সব সময় খোঁজ রাখছি। আমাদের সব রকমের প্রস্তুতি আছে।’
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে নীলফামারীর ডিমলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ছয়টি চর প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ।
টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে থাকে। ফলে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকছে। ইতোমধ্যে মজিদপাড়া, টাবুরচর, পুর্ব খড়িবাড়ি, বাঘের চর, জিঞ্জিরপাড়াসহ ছয়টি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।’
পানি বাড়তে থাকলে এসব এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিস্তা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টার দিকে তা বিপৎসীমা বরাবর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পুরো পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। উজানের ঢলের কারণে পানি বাড়লেও পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’