ধর্ষণের বিচার পেতে সরাসরি হাইকোর্টে হাজির হয়েছেন এক কিশোরী ও তার মা। আইনজীবী ছাড়াই সরাসরি আদালতে ঢুকে তারা ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।
বুধবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিদিনের মতো সকালে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে এক নারী তার কিশোরী মেয়েকে নিয়ে আদালতে হাজির হন। বিচারক পরিচয় জানতে চাইলে ওই কিশোরী নিজের ও তার মায়ের পরিচয় দেন।
সরাসরি হাইকোর্টের বিচার কক্ষে আসার কারণ জানতে চাইলে ওই কিশোরী আদালতকে বলেন, ‘আমার বয়স ১৫ বছর। আমি ধর্ষণের শিকার। এক ব্যক্তি আমাকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু নীলফামারীর আদালত (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল) তাকে খালাস দিয়ে দিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ, টাকাপয়সা নাই। আমরা আপনার কাছে বিচার চাই।’
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এ সময় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে উদ্দেশ করে জানতে চান, তাদের বিনামূল্যে সরকারি আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য এখানে লিগ্যাল এইডের কেউ আছেন কি না।
তখন উপস্থিত লিগ্যাল এইডের আইনজীবী বদরুন নাহার নিজের পরিচয় দিয়ে মামলাটি দেখার দায়িত্ব নেন। পরে আদালত তাকে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন।
আইনজীবী বদরুন নাহার জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর মামলা করেন এই কিশোরীর মা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘সৈয়দপুর শহরের সাজেদা ক্লিনিকে জন্ম নেয়া বোনের নবজাতককে দেখানোর কথা বলে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর বিকেলে ওই ব্যক্তি তার মেয়েকে ( এই কিশোরী) শহরে নিয়ে যান। পরদিন সকাল ৮টায় ওই ব্যক্তির বোন মেয়ের জামা নিতে বাদীর বাড়িতে আসেন। তরকারির দাগ লেগে যাওয়ায় তার পরনের জামা ধুয়ে দেয়া হয়েছে বলে বাদীকে জানানো হয়। রাত ৯টার দিকে ওই ব্যক্তি বাইকে করে মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে আসেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর মেয়ে আবোল-তাবোল বকতে থাকে। ঝাড়ফুঁকেও মেয়ে সুস্থ না হওয়ায় ১২ নভেম্বর নীলফামারীর আধুনিক সদর হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করানো হয়। ওইদিনই মেয়েকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার-ওসিসিতে স্থানান্তর করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের ছাড়পত্রে ‘যৌন নিপীডনের’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনজীবী বদরুন নাহার জানান, মামলাটি তদন্তের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অপরাধের প্রমাণ না পাওয়ার কথা বলা হলে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১৭ মে আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়।
অব্যাহতির ওই আদেশটি পাওয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করা হবে বলে জানানে এই আইনজীবী।