১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর নিজ নির্বাচনি এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনমান উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০১ সালে এটির যাত্রাও শুরু হয়। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দেয়।
তবে শত বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ৩০ হাজার মানুষকে কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, সেলাই, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রয়োজনীয় উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়াসহ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এতে একদিকে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে লক্ষাধিক মানুষের; অন্য দিকে ভূমিকা রেখেছে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০১১ সালে এটিকে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি (বাপার্ড) প্রকল্প হিসেবে রূপান্তর করেন।
বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাপার্ডের। এদিন ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে পুরো বাপার্ড অ্যাকাডেমি বর্ণিল সাজে সেজেছে। আলোকসজ্জায় সেখানে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বাপার্ড একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র। সংশ্লিষ্টদের আশা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এটি। এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে শামিল করতে এই অ্যাকাডেমি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি ২৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ একর জমির ওপর বাপার্ড নির্মিত হয়েছে।
এখানে রয়েছে দুটি ১০ তলা ভবন, অত্যাধুনিক প্রশাসনিক ভবন, হোস্টেল ভবন। রয়েছে পোল্ট্রি, হ্যাচারিসহ বিভিন্ন শেড। নতুন করে সাজানো হয়েছে অ্যাকাডেমির সব পুকুর। এ ছাড়া পুরোনো সব স্থাপনা আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
উদ্বোধনের পর বাপার্ড নতুন আঙ্গিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকাডেমি হিসেবে পথচলা শুরু করবে।
গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাপার্ডের নির্মাণকাজ শেষে হয়েছে। আগামী ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন। এরপরই ২৫ জুন উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দিন বদলে বাপার্ড ও পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাপার্ডকে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা অ্যাকাডেমি হিসেবে আমরা নির্মাণ করে দিয়েছি।’
বাপার্ডের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ তোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আগে থেকেই কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন আঙ্গিকে আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকাডেমি হিসেবে এটি যাত্রা শুরু করবে।
‘এতে মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দক্ষ মানবসম্পদ দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে। অবশ্যই আমাদের দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হবে। এখান থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য চিরতরে বিদায় নেবে।’
বাপার্ডের মহাপরিচালক সৈয়দ রবিউল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার কাছের জেলা গোপালগঞ্জ। কিন্তু পদ্মা নদীর কারণে এ জেলার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে এ জেলার সঙ্গে দেশের সব জেলার যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সেই সঙ্গে বাপার্ড প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের দুস্থ, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে আমরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারব।
‘পদ্মা সেতুর কারণে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এ ছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ গড়বে এই অ্যাকাডেমি। গবেষণা ও গবেষণার ফলাফল বাস্তবায়ন করে আমরা মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করতে সক্ষম হব।’
এই অ্যাকাডেমিতে আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রম আয়োজনের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখান থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। এসব সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে পারব। দেশ উন্নত দেশের মতোই উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হবে।’