বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাংবাদিকের ‘অন্যায়’: ১০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব কার?

  •    
  • ১৫ জুন, ২০২২ ১৯:০৪

বিচারপতি নিজামুল হক নিউজবাংলাকে বুধবার বলেন, খসড়া প্রস্তাবের কোনো কপি তার কাছে নেই। তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগে প্রেস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আইন শক্তিশালী করার প্রস্তাবটি দেয়া হয়েছিল।

কোনো সাংবাদিক অন্যায় করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখে আইন হচ্ছে- বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিমের এমন বক্তব্য নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এই প্রস্তাব কাদের- তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মঙ্গলবার রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে এমন তথ্য জানান। তবে পরদিন সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এ ধরনের কোনো নতুন আইন করা হচ্ছে না। প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার জন্য অনেক আগে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকেই বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এটি এখন ‘প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে’।

মন্ত্রী বলছেন, প্রেস কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্যই হচ্ছেন সাংবাদিক এবং সম্পাদক। তারাই প্রেস কাউন্সিল আইনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে সাংবাদিক নেতাদের দাবি, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার প্রস্তাব সম্পর্কে তারা অবহিত নন, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা কখনও হয়নি।

আর বিচারপতি নিজামুল হক নিউজবাংলাকে বুধবার বলেন, খসড়া প্রস্তাবের কোনো কপি তার কাছে নেই। তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আইন শক্তিশালী করার প্রস্তাবটি দেয়া হয়েছিল।

রাজশাহী সার্কিট হাউসে মঙ্গলবার ‘প্রেস কাউন্সিল আইন ও আচরণবিধি এবং তথ্য অধিকার আইন অবহিতকরণ’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রেস কাউন্সিল আইন কঠোর করার পদক্ষেপ সম্পর্কে জানান বিচারপতি নিজামুল হক।

তিনি বলেন, ‘কোনো সাংবাদিক অন্যায় করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে নতুন আইনে।‘

তবে একই সঙ্গে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকদের অপরাধের জন্য দুই-এক দিনের হলেও জেলের পক্ষপাতি।

তিনি বলেন, ‘জেলে গেলে তার মনে হবে যে আমার কাজটা অন্যায় হয়েছিল। আর করা যাবে না।’

আইনটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, আগামী সংসদেই পাস হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার বিচারপতি নিজামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন কোনো আইন হচ্ছে না। প্রেস কাউন্সিল আইনের ১২ ধারায় কাউন্সিলকে ক্ষমতা দেয়া আছে সতর্ক করা পর্যন্ত। সেখানে পরিবর্তন এনে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার ক্ষমতা যোগ হচ্ছে। আর এটা করা হচ্ছে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার জন্য।

‘এতদিন প্রেস কাউন্সিলকে ঠুঁটো জগন্নাথ বা ক্ষমতাহীনভাবে দেখা যাচ্ছিল। যাদের কোনো ক্ষমতা নেই, তারা কিছু করতে পারে না। এটুকুই, আর কিছু না। প্রেস কাউন্সিল আইনের এই ১২ ধারায় অটো সংশোধনী হচ্ছে আর কিছু না।’

এই সংশোধন প্রস্তাব কাদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই, যারা করবেন তারাই দিয়েছেন, আমি না। আমি তখন আসি নাই। যারা ডিল করেন, তারা করছেন। এটা নিয়ে আপনাদের হইচই করার কিছু নাই। টেনশনের কিছু নাই।’

সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া কপি নিজের কাছে নেই বলেও জানান প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে বুধবার সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি জানি না প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কী বলেছেন। দেশে কোনো নতুন আইন হচ্ছে না। প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার জন্য অনেক আগে প্রেস কাউন্সিলই আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছিল। এটি এখন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

‘প্রেস কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্যই হচ্ছেন সাংবাদিক এবং সম্পাদক। তারাই এটিকে শক্তিশালী করতে প্রেস কাউন্সিল আইনকে সংশোধনের একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দেশে কোনো নতুন আইন হচ্ছে না। উনি (বিচারপতি নিজামুল হক) কী বলেছেন, আর পত্রিকায় কী এসেছে… আমিও পত্রিকায় দেখেছি। আসলে বিষয়টি সে রকম নয়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সংশোধনী প্রস্তাবটি পাঁচ বছর আগের। এটি প্রেস কাউন্সিলের সদস্যরাই করেছেন। সেটি আপনারা তাদের কাছ থেকেই জানতে পারবেন। প্রথমত আমি বলি, প্রেস কাউন্সিল যে আইনটা আছে এটা প্রায় ৫০ বছরে পুরোনো। এই আইনে প্রেস কাউন্সিল হচ্ছে ঠুঁটো জগন্নাথ।

‘কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। ভর্ৎসনা ছাড়া আর কিছুই করার নেই, এমনকি চিমটি দেয়ার ক্ষমতাও নেই। এ জন্য সদস্যরা একটি প্রস্তাব প্রায় পাঁচ বছর আগে তৈরি করেছিলেন।’

ভুয়া সাংবাদিকদের চিহ্নিত করতে প্রকৃত সাংবাদিকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আসলে কারা সাংবাদিক। এখন অনেকগুলো অনলাইন আছে যেগুলোর নিবন্ধন নেই। তারপর আইপি টিভি, ইউটিউব চ্যানেল সবাই কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দেয়। অনেক ইউটিউব চ্যানেল আছে, তারা আবার জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করে। প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য আবার তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। কোথায় প্রতিনিধিকে বেতন দেবে তা নয়, আবার তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়।

‘এই বাস্তবতায় এদের কারণে প্রকৃত সাংবাদিকদের বদনাম হচ্ছে। আসলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তো বোঝে না কারা সাংবাদিক আর কারা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ধোঁকা দিচ্ছে। এ কারণেই আমরা বিভিন্ন সময় আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি যে, সাংবাদিকদের একটি তালিকা থাকলে ভালো হয়।

‘আমরা প্রেস কাউন্সিল ও পিআইবির সঙ্গে আলাপ করেছি। দুটি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করতে পারে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করে এটা করা হয়েছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তালিকা একটা হওয়া উচিত।’

সাংবাদিক নেতারা অন্ধকারে

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের বক্তব্যটুকু পড়েছি। সেটি যদি সঠিক হয়, তাহলে আমি বলব সাংবাদিকদের অপরাধ কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে? তা ছাড়া মামলাতে গেলে দীর্ঘসূত্রতা হবে।

‘তার চেয়ে বড় কথা হলো সাংবাদিকেরা কি ব্যবসায়ী যে, কোনো অপরাধে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে? বিষয়টা আমার কাছে খুবই এলোমেলো মনে হচ্ছে। প্রেস কাউন্সিলের জরিমানা করার কোনো এখতিয়ারই নেই। এটি করবে আদালত, প্রেস কাউন্সিল কেন এটি করবে?’

এ ধরনের কোনো আইন বা আইনের সংশোধনীর বিষয়ে সাংবাদিক নেতাদের মতামত নেয়ার বিষয়টি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতির জানা নেই।

তিনি বলেন, ’এরূপ কোনো আইন বা সংশোধনী হলে অবশ্যই উচিত হবে প্রতিথযশা সাংবাদিক, সাংবাদিক সংগঠনগুলোসহ স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া। সেটি তারা নিয়েছেন কি না আমি বলতে পারছি না। এটি করতে হলে অবশ্যই সাংবাদিকদের সঙ্গে বসা উচিত। আলোচনা করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘আইন পাস করার পর তা নিয়ে হইচই, আন্দোলন কারও কাছে কাম্য নয়। এ জন্য প্রয়োজন সংসদে পাস করার আগেই সবার মতামত গ্রহণ করা।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোন ধরনের অপরাধের জন্য ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান সেটি আগে পরিষ্কার হওয়া দরকার। সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আইনের খসড়াটি এখনও আমি দেখিনি।’

তিনি বলেন, ‘প্রেস কাউন্সিলে এখন যে আইন আছে, সেখানে সাংবাদিকদের অপরাধের জন্য কেবল তিরস্কার করার বিধান আছে। এই তিরস্কার আসলে কীসের জন্য?

‘আমাদের দেশে মানহানির মামলা হয়, সেখানে তার বিবরণ দেয়া আছে। এখন প্রেস কাউন্সিল আসলে কোনটি নিয়ে ডিল করবে সেটি পরিষ্কার থাকতে হবে। কথা হলো, প্রেস কাউন্সিলে কেউ যখন অভিযোগ দেবে সেই অভিযোগ যদি অন্য আইনে সুরাহার সুযোগ থাকে, তাহলে এটির দরকার কেন পড়বে?’

প্রেস কাউন্সিল আইনে সংশোধন করতে হলে অবশ্যই সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই একটা কিছু করলেই তো হলো না। সাংবাদিকদের নীতি-নৈতিকতার বিষয়টি প্রেস কাউন্সিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ওনারা সাংবাদিকদের একটা ডাটাবেজ করতে যাচ্ছেন, সেটাও ওনাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।’

এ বিভাগের আরো খবর