প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটে অনিয়মের অভিযোগ এনে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার হরনি ও চানন্দী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।
হরনি ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে মুসফিকুর রহমান এবং চানন্দী ইউনিয়নের চরনঙ্গলিয়া বেড়িরমাথা বাজারে আমিরুল ইসলাম শামীম বুধবার দুপুর ১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।
ভোটের আগে এলাকায় বহিরাগতদের জড়ো করে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, হুমকি দেয়া, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করাসহ নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে সোমবার প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ভোট বর্জন করা এই দুই প্রার্থী।
এর আগে গত ৩১ মে নির্বাচনি প্রচারে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ‘কাফনের কাপড়’ জড়িয়ে এবং হাতে ‘বিষ’ নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছিলেন তারা। সেখানে ছিলেন ২৫ জন মেম্বার প্রার্থীও।
এবার ভোট শুরুর পর তা বর্জন করলেন তারা।
হরনি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মুসফিকুর রহমান মোরশেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তামাশার ভোট, তামাশার নির্বাচন বর্জন করলাম। নির্বাচন কমিশনার আমাদের যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; সে প্রতিশ্রুতির কিছুই নেই এখানে।
‘প্রশাসনের সহযোগিতায় সব কয়টি গোপন কক্ষে নৌকা মার্কায় জোর করে সুইচ টিপে ভোট নিচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন। ভোটারদের চেয়ারম্যান পদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। সকালে নদীর কূলে কয়েকজন এজেন্টকে আটক করে বেঁধে রাখা হয়। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া হয়। কোনো কেন্দ্রে আমার এজেন্ট দিতে দেয়া হয়নি।’
কোনো কেন্দ্রে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, ‘নারী ও পুরুষের লম্বা লাইন থাকলেও ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না। এটি ভোট নয়, ভোট ডাকাতির মহোৎসব।’
চানন্দী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম শামীম সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হবে। আমাদের সে আশা ব্যর্থ হলো। আমার কোনো এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে নাই।
তাকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমি বারবার হাতিয়ার ইউএনও, ওসি, এএসপি সার্কেল ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ফোন করেছি। ওনাদের কারও কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি।’
তাই এ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট দাবি করেন তিনি।
হরনি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতার হোসেন এসব অভিযোগ নাকচ করেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অনেক সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশে ভোট হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোরশেদ অনেক আগ থেকেই উদ্ভট অভিযোগ করে আসছেন।’
প্রশাসনের সহযোগিতায় নৌকার প্রার্থীর লোকজন জোর করে ভোট নেয়ার প্রতিবাদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন- জানতে চাইলে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। এ প্রথম শুনেছেন। খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন বলে জানান তিনি।
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রার্থী যখন বুঝতে পারে তাদের ভোট নাই, তখন ফন্দি করে ভোট বর্জন করে। আমার কাছে লিখিত বা মৌখিকভাবে কেউ কোনো অভিযোগ করেন নাই।’