রংপুরের বাজারে আজ থেকে পাওয়া যাচ্ছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জের পাড়ায় পাড়ায়।
সকাল থেকেই আমের দরদাম নিয়ে চলছে হাঁকডাক। বাজারগুলোতেও ভিড় বাড়ছে মৌসুমী ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের। এই আম বাজারে থাকবে প্রায় দেড় মাস। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় শুরুতেই দাম একটু চড়া বলে জানিয়েছেন আম চাষি এবং ব্যবসায়ীরা।
বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ বাজারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। একই অবস্থা রংপুরের সিটি বাজার, টার্মিনাল এলাকায়।
এবার দাম কেমন:
মোকামগুলোতে প্রকারভেদে দাম হাঁকাচ্ছেন বাগান মালিকরা।
পদাগঞ্জ এলাকার আম চাষি ফরমান আলী জানান, বড় আকারের আম (কাঁচা) বাজারে প্রতি মণ ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারিটা ১৩০০ থেকে ১৪০০ আর ছোটটা এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা রুবেল মিয়া বলেন, ‘আমি দুই মণ আম কিনলাম। যেটা বড় সেটা ১৬০০ টাকা দরে, আর মাঝারিটা ১৪০০ টাকা দরে। আমি এই আম সারাদিন ভ্যানে করি বিক্রি করি।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর এই দিনে ভালোটা মানে বড়টার দাম ছিল ১১০০ টাকা, যা এবার কিনলাম ১৬০০ টাকায়। বাগান মালিকরা বলতেছে, এবার গাছোত (গাছে) নাকি আম কম, তাই দাম বেশি নিতেছে।’
এদিকে, খুচরা বাজারে ৫০ টাকা দরে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এই আম।
কেন দাম বেশি:
রংপুরের মিঠাপুকুর পদাগঞ্জ এলাকার আমচাষি হজরত আলী বলেন, ‘গত বছর আমার ছয়টা বাগান ছিল। আমি ২১০০ মণ আম বিক্রি করেছি। এবারও ছয়টা বাগান আছে, কিন্তু অত আম হবে না। খরচ তো একই হইছে। সে কারণে এবার দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।’
ক্রেতা সুরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘যে আমটার কালার ভালো, লাল মাটির আম সেটা চায় ১৮০০ টাকা মণ। দামাদামি করার পর কম নেয়। আমি প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মণ কিনি, ঢাকাসহ বিভিন্ন জাগাত (জায়গায়) পাঠাই। আজ কিনছি মাত্র ৯ মণ, এত দাম হবে ভাবি নাই। আজ পদাগঞ্জ বাজারোত (বাজারে) শুনতেছি আরও নাকি বাড়বে।’
জমাল মিয়া নামে একজন বলেন, ‘আজ প্রথম দিন। আমরা ভাবি নাই এত দাম হবে। পদাগঞ্জ বাজারে ঘর নিছি। সুবিধা মত দামে আম কিনে পাঠাতে হবে। কারণ, ভ্যানের ভাড়াও বাড়ছে। যে ক্যারেট ১২০ টাকা ছিল সেটা ১৫০ টাকা।’
স্থানীয় আবুল হোসেন বলেন, ‘এবার বৃষ্টি এবং শিলা ঝড় হইছে। অনেক আম পড়ে গেছে। এ ছাড়াও অনেক গাছে অল্প অল্প করে আম ধরছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসছেন। তারাও একটু দাম বেশি বলছেন। আমরা আশা করছি ভালো দাম পাওয়া যাবে।’
আম চাষ:
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রংপুর মেট্রোপলিটনসহ জেলার আটটি উপজেলায় এবার এক হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকায় ২৫, রংপুর সদরে ৬০, কাউনিয়ায় ১০, গঙ্গাচড়ায় ৩৭, মিঠাপুকুরে এক হাজার ২৭০, পীরগঞ্জে ৬০, পীরগাছায় ১০, বদরগঞ্জে ৪০০ ও তারাগঞ্জে ১৫ হেক্টর জমি রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৬ টন।
রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা:
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহীন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৬ টন। প্রতি টন গড়ে বিক্রি হবে ৩৩ হাজার টাকায়। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে প্রায় শত কোটি টাকার আম (হাঁড়িভাঙ্গা) বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর মাসতোয়া এগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এখানকার আম বিদেশে রপ্তানি করেছে। এবারও তারা রপ্তানি করবে। আমরা অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, আশা করছি তারা এগিয়ে আসবে।
‘এ ছাড়াও অনলাইনে আম বিক্রি করতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। চাষিরা যাতে আম বিক্রি করতে কোনো প্রকার অসুবিধায় না পড়েন, সেজন্য সারা দেশের ৯২ জন ফল ব্যবসায়ীর মোবাইল নম্বর কালেক্ট করে তা লিফলেট আকারে বিতরণ করেছি আমরা।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু এই আমের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এমনকি দেশের বাইরেও। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে বিভিন্ন দেশে এই আম পাঠিয়েছেন।’
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘আমের সবচেয়ে বড় হাট পদাগঞ্জে। সেখানে হাট সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। কিছু কিছু কাজ চলমান আছে। এ ছাড়াও যে কোনো সমস্যা সমাধানে প্রশাসন কাজ করছে।’