কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে পোলিং কর্মকর্তার উঁকি মারা নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে, তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরায় কাউকে গোপন কক্ষে উঁকি মারতে দেখা যায়নি।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ও দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচন মনিটরিং করতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের লেভেল-৪-এর ৪১৩ নম্বর কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে ইসি।
পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সমন্বয়ক ইসির আইডিইএ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের উপপরিচালক (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম বুধবার বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে জানান, গোপন কক্ষে কাউকে উঁকি মারতে দেখা যায়নি সিসিটিভিতে।
যদিও এর আগে কুমিল্লা রেয়াজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে দুজনকে দেখা যাওয়ার ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে ১১টা ২৫ মিনিটে। এ ছাড়া দৈয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা বুথে এক পোলিং কর্মকর্তার উঁকি মারার ছবিও প্রকাশিত হয়েছে।
গোপন কক্ষে উঁকি দেয়া নিয়ে স্কোয়াড্রন লিডার শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘সব গোপন কক্ষই আমরা সিসি ক্যামেরায় দেখতে পাচ্ছি। গোপন কক্ষে উঁকি দিচ্ছে, এ রকম আমরা দেখিনি। কেউ উঁকি দিলে সেটা আমরা দেখতে পেতাম। দেখলে অ্যাকশন নিতাম।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মনিটর করে এখন পর্যন্ত আমরা অস্বাভাবিক কিছু পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ ছিল যে, ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে দুজন ব্যক্তি থাকে। তা এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। একটি অভিযোগ এসেছিল। আমরা খতিয়ে দেখেছি, সে ধরনের কিছু ছিল না৷’
সারা দেশে বুধবার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ১ হাজার ৪৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তার মধ্যে কুমিল্লায় ৮৫০টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আর পাঁচ পৌরসভায় ৫৯০টি বসানো হয়েছে।
ইসির সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১৪ জুন সকাল ৬টায় পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। মনিটরের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রগুলোয় যা হচ্ছে, তা তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। ইসির মোট ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এতে দায়িত্ব পালন করছেন। সবসময় পাঁচজনে ৮ ঘণ্টা করে এই দায়িত্ব পালন করছেন।
আগামী ১৬ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা এই পর্যবেক্ষণ করবেন। ভোটকেন্দ্র বা ভোটকক্ষে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে বা কারিগরি সমস্যা পরিলক্ষিত হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় কিছু ভোটে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের পাশাপাশি অনলাইনেও ভোট গ্রহণ তদারকি করা হয়।
পরে এটি ব্যাপক আকারে আর ব্যবহার করা হয়নি। যদিও ২০১৪ সালের পর থেকে ব্যাপকভাবে কেন্দ্রে ঢুকে সিল মারার অভিযোগ আসতে থাকে। গত নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহার বাড়ানোর পরও জোর করে ভোট নেয়ার অভিযোগ থামেনি।
ইভিএমে কারও পরিচয় নিশ্চিত না হলে ভোট দেয়ার সুযোগ নেই, তবে একজন ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করার পর তিনি গোপন বুথে গেলে তাকে সহায়তা করার নামে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে। প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ।
সম্প্রতি একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, এভাবে একজনের ভোট আরেকজন যেন দিয়ে দিতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করাই তাদের চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে ‘ডাকাত’ ঠেকানোই তাদের লক্ষ্য।