দেশের কথা ভেবে এই বর্ষায় ফলদ, বনজ কিংবা ভেষজ গাছের যেকোনো একটি রোপণে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারি দপ্তর ও শহুরে বাসিন্দাদের ছাদবাগান তৈরির পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
নিজ বাসভবন গণভবনে আষাঢ়ের প্রথম দিন বুধবার সকালে ছাতিম, সফেদা ও হরিতকির চারা রোপণ করে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে গণভবনে এ তিন গাছের চারা রোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশটাকে রক্ষা করতে হবে। তাই আমি দেশের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ছোট্ট শিশু থেকে যারা বয়স্ক, সবাইকে আমি বলব, আপনারা যে যেখানে আছেন, নিজেরা একটা গাছ লাগান।’
শহরবাসীর বৃক্ষরোপণের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি তুলে ধরে ছাদবাগানের পরামর্শ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘শহরে যারা আছেন, তারা ফ্ল্যাটে থাকেন, গাছ লাগাতে পারেন না। তবুও আপনাদের ছোট্ট বেলকনিতে, টবে একটু ফুলের গাছ লাগাতে পারেন বা কিছু পছন্দমতো তরকারি সবজি—এগুলোও লাগাতে পারেন।
‘নিদেনপক্ষে একটা কাঁচামরিচ গাছ লাগালেও লাগাতে পারেন, যেটা নিজেদেরই ভালো লাগবে। তা ছাড়া ছাদবাগান এখন যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কাজেই ছাদবাগান করতে পারেন।’
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরেও ছাদবাগান তৈরির নির্দেশনা ছিল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারি অফিস যেখানে আছে, তাদেরকেও বলব, আপনারা আপনাদের ছাদবাগান করতে পারেন। তাতে পরিবেশটা সুন্দর থাকবে। আর তা ছাড়া দেশের জন্যও এটা কল্যাণকর হবে, মঙ্গলজনক হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি, ট্রাস্ট ফান্ড করেছি। কাজেই আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বোধ হয়, বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশই জলবায়ু অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য ট্রাস্ট ফান্ড করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এই ফান্ড করে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
আষাঢ়ের প্রথম দিনে দেশবাসীকে বর্ষার শুভেচ্ছা জানিয়ে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ষার সময় সবাই একটু সতর্ক থাকবেন। আপনাদের চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া সবকিছুতেই একটু সতর্কভাবে চলতে হবে। কারণ বর্ষায় নানা রকম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। মশা-মাছির উপদ্রব থেকে নিজেদের রক্ষা করবেন।
‘আর সেই সঙ্গে যে যেখানে পারেন, নিজের এলাকায় হোক, গ্রামে হোক, যেভাবে পারেন গাছ লাগান। গাছ আমাদের বন্ধু। গাছ আর্থিকভাবেও লাভজনক। গাছের ফলটাও আপনি ব্যবহার করতে পারেন। বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন, পাড়া-প্রতিবেশীকে দিতে পারেন।’
বৃক্ষরোপণে দলীয় কর্মসূচির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৮৫ সাল থেকে ব্যাপকভাবে ১ আষাঢ় আমরা সমগ্র বাংলাদেশে বৃক্ষেরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করি এবং তা বাস্তবায়ন করি। আমাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশ ছিল যে অন্তত তিনটা করে গাছ লাগাবে। একটা করে ফলের গাছ, একটা হচ্ছে কাঠের জন্য, আরেকটা হচ্ছে ভেষজ গাছ, যেটা থেকে ওষুধ তৈরি করা যায়।’
ওই সময় থেকে প্রতি বছর এভাবেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তখনও বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি আসেনি, কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ সবসময় দেশের কথা চিন্তা করি, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করি, পরিবেশের কথা চিন্তা করি। আমাদের দেশটা একটা ব-দ্বীপ। এই দেশটাকে যথাযথভাবে রক্ষা করার জন্য আমরা এই কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি।’
বৃক্ষরোপণের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিসহ সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।