কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার চলাকালে এলাকা ছাড়তে নির্বাচন কমিশন যে চিঠি দিয়েছিল, তা নিয়ে ভোটের দিন মুখ খুললেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
তার দাবি, নির্বাচন কমিশনের সেই চিঠিটি এখতিয়ারবহির্ভূত।
সংসদ সদস্য হিসেবে ভোটের প্রচারে নামতে আইনে বাধা আছে। তবে বাহার পরোক্ষভাবে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে কাজ করছেন- এমন অভিযোগ এনে ৬ জুন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। দুই দিন পর নির্বাচন কমিশন এক চিঠিতে বাহারকে নির্বাচনি এলাকা থেকে বাইরে যেতে বলে।
তবে বাহার এই নির্দেশ না মেনে যান আদালতে। আর উচ্চ আদালত কমিশনের সিদ্ধান্ত ১৫ জুন অর্থাৎ ভোটের দিন পর্যন্ত স্থগিত করে। ফলে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের এলাকায় অবস্থানের কোনো বাধা ছিল না। আর বাহার সশরীরে ভোটের প্রচারে নেমেছেন- এমন কোনো উদাহরণও ছিল না।
তবে এই বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসবেন বলেও বাহার গণমাধ্যমের সামনে আসেননি।
আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করেন, নির্বাচন কমিশন এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে তাকে চিঠি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাকে যে চিঠিটা দিয়েছে, ইতোমধ্যে যারা ইয়েলো জার্নালিজম করেন, তারা বিভিন্নভাবে আমাকে হ্যারাসমেন্ট করেছেন।’
‘আসলে আপনারা কেউ নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনাদের কোনো অথোরিটি আছে? যে আইনটা বলি আপনাদের, সেই আইনটা হচ্ছে সরকারের সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি নির্বাচনের প্রচারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আই অ্যাম নট দ্য পার্ট অফ দ্য গভর্নমেন্ট, আমার ঠিকানা হচ্ছে আমি জাতীয় সংসদের পার্ট, আমি জাতীয় সংসদের সদস্য। আই অ্যাম দ্য মেম্বার অফ দ্য পার্লামেন্ট।
‘আমাকে এই আইনের আওতায় আটকে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি চেয়েছিলাম, আমার প্রিয় নেত্রী যেমন চায় একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন, আমিও কুমিল্লায় একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন চাই।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন
নির্বাচন কমিশন তাহলে নিজেরাই আইন লঙ্ঘন করেছে- এমন প্রশ্নে বাহার বলেন, ‘আমার মনে হয়। আইন তো সবার জন্য সমান। আইনটা নির্বাচন কমিশনের আগে মানতে হবে। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি, একজন নির্বাচন কমিশনার আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আই অ্যাম আ ল মেকার, আমি আইন ভঙ্গ করেছি। আপনাদের সবার কাছে আমার প্রশ্ন, আপনারা কি কোথাও দেখেছেন আমাকে? আমি কীভাবে আইন ভাঙলাম?
‘তিনি যে চিঠি দিয়েছেন, এটি ওনি এখতিয়ারবহির্ভূত দিয়েছেন। ভাষাগতভাবেও ঠিক হয়নি। জাতীয় সংসদ সদস্যকে এভাবে নির্দেশ শব্দ ব্যবহার করতে পারেন না। চিঠিটা অসমাপ্ত। এতে আইনের পুরো ব্যাখ্যা এখানে নেই। যদিও আইনটি নিয়ে আমার পার্লামেন্টে কথা বলতে হবে। আইনটি আমরা সংশোধন করব ইনশাআল্লাহ।
‘আমি হাইকোর্টে এটার জন্য রিট করেছি, একটা রুলও পেয়েছি। এই জন্য করেছি, এটি পরিবর্তন হবে। একজন সংসদ সদস্য যেহেতু সরকারের অংশ না, তাহলে আমার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।’
‘কুমিল্লায় নৌকার জয় নিশ্চিত’
বাহারের অনুমান, গত দুই সিটি নির্বাচনে হারলেও এবার কুমিল্লায় জয় হবে নৌকার।
তিনি বলেন, ‘চুরাশি সাল থেকে আমি যত নির্বাচন করেছি সব নির্বাচনেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের জামানত নিয়ে যেতে কষ্ট হয়েছে। এই নির্বাচনেও এই চিঠিই আমাকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। আমাকে চিঠি দেয়ার কারণে কুমিল্লার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আজকে সবাই নৌকার পক্ষে ভোট দিচ্ছে।
‘এই নৌকার জন্য ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় ১৪ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য নৌকার বিকল্প কোনো প্রতীক নাই। আমি নৌকায়ই ভোট দিয়েছি। নৌকারই বিজয় হবে, বাহারের কোনো বিজয় হবে না।’
কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
কুমিল্লায় ভোটের পরিবেশ কেমন- এমন প্রশ্নে বাহার বলেন, ‘আমি ভোট দিতে এসে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ পেয়েছি। শান্তির কুমিল্লায় সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। সকালবেলা একটু বৃষ্টি হয়েছিল। ভোটাররা একটু হতাশ হয়েছিল যে কীভাবে ভোট দেবে।
‘আমার মনে হয় বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর ভোটাররা উৎসব-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিচ্ছেন। কারণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। কোথাও কোনো গণ্ডগোল নাই, ঝামেলা নাই।’
কুমিল্লায় গত দুই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাদের প্রার্থী করেছিল তারা ছিলেন নিজ দলে বাহারের প্রতিদ্বন্দ্বী আফজল খানের বলয়ের।
২০১২ সালে আফজল খান এবং ২০১৭ সালে তার মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ। প্রথমবার ৩৫ হাজার ভোটে এবং দ্বিতীয়বার ১১ হাজার ভোটে হেরে যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
আফজল খান গত বছর মারা যাওয়ার পর তার বলয়ের প্রভাব অনেকটাই কমে গেছে। আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী করেছে বাহারের বলয়ের আরফানুল হক রিফাতকে। এ কারণে বাহার বলয় এবার ভোটে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
বাহার বলেন, ‘আমি আপনাদের সব টিভির মাধ্যমে প্রশাসনকে বলতে চাই যে অতি উৎসাহী কোনো কর্মকর্তা যেন পরিবেশ নষ্ট না করে। ক্যান্ডিডেট এবং সমর্থকরা উৎসবমুখর অবস্থায় আছে। সারা কুমিল্লায় উৎসবের আমেজ চলছে।
‘কোথাও ১০-১২ জন ছেলেপেলে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকলে অতি উৎসাহী কোনো কর্মকর্তা যেন তাদের হ্যারাস না করে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তখন আপনারা কাজে নামেন। আমার প্রিয় কুমিল্লাবাসীর প্রত্যেকেই যেন সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সব কর্মকর্তার প্রতি এটা আমার অনুরোধ।’
কয়েকজন ভোটার ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ পেয়েছেন বলেও জানান সংসদ সদস্য।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কমপ্লেন এসেছে যে কয়েকজন ভোটার আইডি নিয়ে গেছে, কিন্তু চিঠি নিয়ে যায়নি। তাই তাদের ভোট দিতে দেয়নি। এখন চিঠি তো ভোটের অংশ না, আইডি অংশ। দু-একজন ম্যাজিস্ট্রেট এমন আছেন যারা আইডি আটকে রেখেছেন।
‘আমি সব কর্মকর্তাকে বলব, একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আপনারা সহযোগিতা করবেন।’
কুমিল্লা সিটিতে বুধবার সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে।
২৭টি ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী এবং ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন পুরুষ। ট্রান্সজেন্ডার ভোটার রয়েছেন দুজন।