কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে একজন আঙুলের ছাপ দিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করার পর অন্য কেউ তার হয়ে যেন বাটনে টিপ দিতে না পারে, সেটি নিশ্চিতের চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটকেন্দ্রের ভেতরে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মী, প্রার্থীদের এজেন্ট আর ভোটারের বাইরে যেন কেউ না থাকতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে দূর থেকেও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। তবে গোপন বুথ, যেখানে ঢুকে ভোটাররা তাদের প্রার্থী বাছাই করবেন, সেটি এই ক্যামেরার আওতার বাইরে থাকবে।
বুধবারের এই ভোট বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রথম পরীক্ষা। এদিন এই এলাকা ছাড়াও ১৩৫টি ইউনিয়ন, ৫টি পৌরসভা ও একটি উপজেলায় ভোটের তফসিল দিয়েছিল কমিশন। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও প্রার্থীদের আচরণ-হুমকি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ওপর হামলাসহ নানা ঘটনায় ৯টি এলাকায় ভোট স্থগিত করা হয়েছে, যার মধ্যে আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা।এর মধ্যে কুমিল্লা সিটি ছাড়াও পাঁচ পৌরসভায় ৫৯০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুমিল্লায় ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকক্ষের প্রতিটিতে বসানো হচ্ছে এই যন্ত্র। কেউ কেন্দ্রের ভেতরে কোনো ধরনের জোর খাটানোর চেষ্টা করলে তা ক্যামেরায় ধরা পড়বে। আর ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু না হলে কোনো বুথ বা কেন্দ্রে বা গোটা নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা আছে।
কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কমিশন এ ব্যাপারে খুবই শক্ত৷ জোর করে ভোট আদায় করার সুযোগ নাই৷ নির্বাচনের দিন যদি কোনো তথ্য আসে যে অনিয়ম হয়েছে, তাহলে আমরা নির্বাচন বন্ধ করে দেব।’
ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা অভিযোগ থাকে ভোটকেন্দ্রে মানুষ ঢুকে অনেক সময় কারসাজি করে। সেটি হয় কি হয় না সেটা প্রমাণের ব্যাপার।’
সিসি ক্যামেরায় ভোটের আগের দিন থেকে ভোটের পরের দিন সকাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে রেকর্ডিং হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ অভিযোগ দেয় কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, ফলস ভোট দেয়া হয়েছে, তাহলে আমরা দেখে কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারব।’
নির্বাচন কমিশনের আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহানসিং একসেস টু সার্ভিসেস বা আইডিইএ-২ প্রকল্পের উপপরিচালক (কমিউনিকেশন) শাহরিয়ার আলম শাওন বলেছেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশপথে ও ভোটকক্ষের প্রবেশপথে ক্যামেরা থাকবে। তবে গোপন বুথ অর্থাৎ যেখানে ভোটাররা ভোট দেন, সেই বুথ সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে না।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় কিছু ভোটে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের পাশপাশি অনলাইনেও ভোটগ্রহণ তদারকি করা হয়।
কিন্তু পরে এটি ব্যাপক আকারে আর ব্যবহার করা হয়নি, যদিও ২০১৪ সালের পর থেকে ব্যাপকভাবে কেন্দ্রে ঢুকে সিল মারার অভিযোগ আসতে থাকে। গত নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহার বাড়ানোর পরও জোর করে ভোট নেয়ার অভিযোগ থামেনি।
ইভিএমে কারও পরিচয় নিশ্চিত না হলে ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। তবে একজন ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করার পর তিনি গোপন বুথে গেলে তাকে সহায়তা করার নামে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে। প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ।
সম্প্রতি একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এভাবে একজনের ভোট আরেকজন যেন দিয়ে দিতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করাই তাদের চ্যালেঞ্জ। বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে ‘ডাকাত’ ঠেকানোই তাদের লক্ষ্য।
কুমিল্লা সিটিতে ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী এবং পুরুষ ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। ট্রান্সজেন্ডার ভোটার রয়েছেন দুইজন।
দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার। এরপর ২০১২ ও ২০১৭ সালে দুইবার নির্বাচন হয়। দুটি নির্বাচনেই জয় পান মনিরুল হক সাক্কু। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তবে তার দল ভোট বর্জন করায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন।
সাক্কুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত। স্বেচ্ছাসেবক দলের আরেক নেতা নিজামউদ্দিন কায়সারও আছেন ভোটের মাঠে।