বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প: প্রতিবাদে উত্তাল কেন্দুয়া

  •    
  • ১৪ জুন, ২০২২ ১৯:৪৪

কামাল হোসেন বলেন, ‘এ এলাকাতেই আরও খাসজমি আছে। সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা জোর করে খেলার মাঠটি নষ্ট করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত খেলার মাঠ রক্ষার ব্যাপারে আন্তরিক। কিন্তু প্রশাসন কেন জোর করে একমাত্র খেলার মাঠটি দখলে নিতে চাচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল এলাকার ‘শত বছর পুরানো’ একটি খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেছেন। খেলার মাঠে মিছিল ও মানববন্ধন করে মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে তারা এ বিক্ষোভ দেখান।বলাইশিমুল এলাকার তিন শতাধিক নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থী দুপুর ১২টার পর থেকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বলাইশিমুল খেলার মাঠে জড়ো হন। পরে তারা প্রথমে মাঠের চারপাশ ঘুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে মাঠে দাঁড়িয়ে করেন মানববন্ধন। এ সময় মাঠটি দখল না করে উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন, মাহতাব উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, মামুন মিয়া, শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম, ছবিরুল ইসলাম, আরিফুল হক, পলাশ, একেএম আজহারুল, গৃহিনী আরিফা আক্তার, লুৎফা আক্তার, মরিয়ম বেগমসহ আরও অনেকে।বিক্ষোভ চলাকালে স্থানীয় ইউএনও মাহমুদা বেগম ছাড়াও কয়েকজন কর্মকর্তা এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ ছিলেন মাঠে। তারা প্রথমে বিক্ষোভে বাধা দেন। তবে কর্মসূচি চালিয়ে যান স্থানীয়রা।বলাইশিমুল গ্রামের কামাল হোসেন জানান, বলাইশিমুল গ্রামে ১ একর ৮৭ শতক সরকারি ভূমির ওপর এ খেলার মাঠ। শতবছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় যুবক ও শিশু-কিশোররা এখানে খেলাধুলা করেন। কিছুদিন আগে স্থানীয় প্রশাসন সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৫টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দেন। তারা ওই মাঠের পরিবর্তে আশপাশের অন্য কোনো খাসজমিতে ঘর নির্মাণের দাবি জানান। এ দাবিতে এর আগেও একাধিকবার মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ করার পাশাপাশি প্রশাসনের কাছেও আবেদন-নিবেদন এবং মামলা করেন তারা। কিন্তু তাদের দাবি অগ্রাহ্য করে উল্টো পুলিশ পাহারা বসিয়ে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে প্রশাসন। এতে আরও লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়। এমন পাল্টপাল্টি অবস্থার মধ্যেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ঘরের নির্মাণ কাজ গত ২৬মে রাতে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় কে বা কারা। পরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী মাজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন। এই মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর তালুকদার এবং সাবেক মেম্বার হায়দার আলী তালুকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন। স্থানীয় হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকার ছেলেমেয়েরা সবসময় এ মাঠে খেলাধুলা করেন। ঐতিহ্যবাহী এ মাঠটি রক্ষার জন্য আমরা শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নিরুপায়ে আমরা এলাকার ৮ জন বাসিন্দা গত ৩০মে জেলা প্রশাসক, কেন্দুয়ার ইউএনও, সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) চারজনকে বিবাদী করে সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছি। কিন্তু মামলার পরও তারা পুলিশ পাহারায় ঘর নির্মাণ করে যাচ্ছে। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েও হয়রানি করছে।’কামাল হোসেন বলেন, ‘এ এলাকাতেই আরও খাসজমি আছে। সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা জোর করে খেলার মাঠটি নষ্ট করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত খেলার মাঠ রক্ষার ব্যাপারে আন্তরিক। কিন্তু প্রশাসন কেন জোর করে একমাত্র খেলার মাঠটি দখলে নিতে চাচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দুয়া উপজেলার ইউএনও মাহমুদা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করার জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী জায়গা। তাই আমরা এ জায়গাটি বেছে নিয়েছি। ওই এলাকার ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদেরকেই সেখানে আশ্রয় দেয়া হবে। গুটিকয়েক লোক বিরোধিতা করলেও বেশির ভাগ লোক ঘর নির্মাণের পক্ষে। তা ছাড়া আদালতও প্রশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানলে আমরা আরও কঠিন আন্দোলন শুরু করব। যে কোনো মূল্যে আমরা শতবছরের পুরানো মাঠটি রক্ষা করব।’

এ বিভাগের আরো খবর