বছরের পর বছর ধরে সাভারে চোরাই গ্যাস ব্যবহার করে আসছিলেন একটি গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবার। একটি চক্রের মাধ্যমে সংযোগপ্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলেন তারা। অবৈধ সংযোগ ব্যবহার হয়ে আসছিল মসজিদের ইমামের বাসায়ও। এতে সরকার হারিয়েছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
অবশেষে তিতাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ওই এলাকার এসব সংযোগ। মঙ্গলবার সকাল থেকে আশুলিয়ার উত্তর তাজপুর গ্রামে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযান চালায় সাভার আঞ্চলিক তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।
তারা প্রায় ৫০০ আবাসিক বাসাবাড়ির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। জব্দ করা হয় সংযোগে ব্যবহৃত নিম্নমানের পাইপ, রাইজার ও চুলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে একেকটি সংযোগ নিয়েছেন তারা। রাতের আঁধারে মাটি খুঁড়ে তাদের সংযোগ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সাবেক মেম্বার আলমগীর হোসেনসহ অনেকেই এই অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত। এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ মসজিদের ইমামের বাসায়ও জ্বলছে।’
অভিযানের একপর্যায়ে তাজপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমামের বাসায় গিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সন্ধান মেলে।
ইমাম মোহাম্মদ শামীম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই এলাকার সবাই যখন অবৈধ লাইন লাগায়, তখন আমারেও লাগায় দিছে। মূলত সামাজিকভাবেই মসজিদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়। সে ক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির মাধ্যমেই এখানে সবকিছু করা হয়েছে। আমি তো মসজিদের দেয়া বাসায় থাকি মাত্র। অবৈধ সংযোগের বিষয়ে মসজিদ কমিটির লোকজন বলতে পারবেন।’
তাজপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন সবকিছু অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেন।
আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ’আমি মসজিদ কমিটিতে সভাপতি হইছি ৪-৫ বছর আগে। এলাকায় অবৈধ গ্যাস তো লাগায় দিছে ১০-১২ বছর আগে। তখন তো মসজিদের কমিটিতে আমি ছিলাম না। আমি কখনই অবৈধ লাইনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’
সাভার আঞ্চলিক তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক (বিপণন) আবু সাদাত মো. সায়েম বলেন, ‘আজ প্রায় ২ কিলোমিটার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি আমরা। এতে প্রায় ৫০০ বাড়ির সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এক, দেড় ও দুই ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ, রাইজার, চুলাসহ নিম্নমানের ফিটিংস জব্দ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে অসাধু চক্র এসব লাইন গ্রাহকদের বিতরণ করেছিল।’
সাবেক ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানে জড়িত কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরাও এটাই শুনলাম। এখন আমরা এজাহার (অভিযোগ) দেব। তারপরে পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। ৮-১০ বছর ধরে ওই এলাকায় অবৈধ সংযোগ ছিল কি না সেটা আমি জানি না।’
সাভার আঞ্চলিক তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আওতায় বৈধ আবাসিক সংযোগ ৫২ হাজার। অবৈধ সংযোগের সংখ্যা এর কয়েক গুণ বলে ধারণা করা হয়।