ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নের দুই-তিনটি চরে রয়েছে গরু-মহিষের ঘর ও মাছের আড়ত। ভাঙনে বাড়ি হারানো মানুষগুলো জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়ে বাস করছেন, সুযোগ-সুবিধাও নিচ্ছেন সেখান থেকেই।
তারপরেও আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হবে সেখানে ভোট, তবে ভোট ইউনিয়নে নেয়া হবে না, নেয়া হবে পৌরসভায়।
৯টি ওয়ার্ডের ইউনিয়নটির মোট ভোটার তিন হাজার ৪৪০ জন।
নদীভাঙনে সব বিলীন হয়ে যাওয়ায় কাগজে-কলমে চলছে এ ইউনিয়নের কার্যক্রম। ইউনিয়নটিতে কোনো স্থলভাগ না থাকায় আগামীকাল বুধবার পৌরসভার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে একত্রে ৯ ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
হাজীপুর ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড পোস্টারে ছেয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, পাশ্ববর্তী ভবানীপুর, চর খলিফা ও সৈয়দপুর ইউনিয়নেও পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা এসব ইউনিয়নে পোস্টারিং করেছেন, ছুটছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝে জনমানবহীন ইউনিয়ন, নেই তেমন কোনো ঘরবাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠান। গত বছর মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ নানা স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, ভোলার দৌলতখান উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাচীনতম ইউনিয়ন হাজীপুর। এক যুগের বেশি সময় ধরে মেঘনার ভাঙনে ইউনিয়নটি বিলীন হয়ে গেছে। এখন ২০ থেকে ৩০ ফুট পানির নিচে অবস্থান করছে ইউনিয়নটি।
এই ইউনিয়নের বাসিন্দা আলম সিকদারসহ একাধিক ভোটার জানান, নদীভাঙনের কারণে ইউনিয়টি বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখানকার বাসিন্দারা এখন বিভিন্ন উপজেলায় বসবাস করে অন্য ইউনিয়নের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। আর এই ইউনিয়নের সরকারি বরাদ্দের কিছুই তারা পাচ্ছেন না।
বলেন, ‘নির্বাচন আসলে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রত্যাশা করেন প্রার্থীরা, ভোট শেষ হলে তাদের আর খোঁজখবর থাকে না। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ না থাকায় পরিষদ থেকে দাপ্তরিক কাগজপত্রের জন্য তাদের বাড়িতে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়।’
ওই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হামিদুর রহমান টিপু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবী আবদুল্লাহ কিরণ পাটওয়ারী নির্বাচন শেষে হাজীপুর ইউনিয়নে বসবাসের উপযোগী আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের পাশাপাশি নানা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
এদিকে দৌলতখান উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবদুস সালাম বলেন, ‘হাজীপুর ইউনিয়নটি নদীর মাঝখানে হওয়ায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেয়ার পরিবেশ ও পরিস্থিতি নেই। পাশাপাশি বর্ষার সময় নদী উত্তাল থাকায় দৌলতখান পৌরসভায় ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
ইউনিয়নটি নদীগর্ভে বিলীন, তারপরেও নির্বাচন- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব ঠিক করেছেন। আমাদের কাজ হলো নির্বাচন পরিচালনা করা। আমরা তাই করছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা করার প্রয়োজন, আমরা তাই করব।’
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারেক হাওলাদার জানান, নদীভাঙনের কারণে ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয়েছে কি না, বিষয়টি দেখবে নির্বাচন কমিশন। পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য ছাড়া কোনো ইউনিয়নকে বিলুপ্ত বলা যায় না।
তিনি আরও বলেন, ‘২০১১ সালের আদমশুমারি বিবেচনায় নিয়ে জনসংখ্যা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন বিলুপ্ত বা নেই এর কোনো অফিশিয়াল অর্ডার। বিবিএস পরিসংখ্যান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা। তারা ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমরা বিলুপ্ত বলতে পারি না। বিলুপ্ত হয়েছে এমন কোনো পত্র নেই।
‘ভোটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। জেলা, সদর ও দৌলতখান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা সরেজমিন দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা পুরোপুরি তাদের বিষয়। আমরা প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখব, অন্য কিছু নয়।’
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ শফিকুল হক বলেন, ‘চরাঞ্চলে বর্ষার সময় কোনো মানুষ থাকে না, সবাই উপজেলার উপস্থলে বিভিন্ন এলাকায় থাকে। এ ছাড়া চরে এক-দুটি মহিষের টিলা, মাছের আড়ত আছে, তাই সেখানে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কিংবা নির্বাচনের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তরা স্পটে গিয়ে থাকতে পারবে না। তাই আমরা এসব দেখে কমিশনের কাছে মেইনল্যান্ডে নির্বাচন করার অনুমতি চেয়েছি এবং কমিশন অনুমতি দিয়েছে। তাই পৌরসভার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ করা হবে।’
দুটি মহিষের ঘর আর মাছের আড়ত নিয়ে একটি ইউনিয়ন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করেছে, তার প্রতিনিধি হিসেবে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করব। তারা বন্ধ করে দিলে করব না বলে মন্তব্য করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।’
অষ্টম ধাপে হাজীপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দুইজন, মেম্বার পদে ২৩ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।