দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে পারলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কেন সে সুযোগ পাবেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।
এক দেশে দুই আইন চলছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন তিনি (হাজি সেলিম) আইন মেনে চলেছেন। কোন আইন মেনে চলেছেন সেটা আমরা জানতে চাই। সেটা কোন আইন যে আইনের জন্য বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা করাতে পারবে না।’
সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়াকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে মহিলা দল এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
রাজধানীল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। ছবি: নিউজাবংলা
সেলিমা বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে আজকে মিথ্যে মামলায় অভিযুক্ত করে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আজ তাকে চিকিৎসার কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা বারবার বলেছি তার যে চিকিৎসা প্রয়োজন, এটা বিদেশে না পাঠালে সম্ভব নয়। আজকে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। একই বছর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর সাজা হয় সাত বছরের।
দুই বছর কারাভোগের পর করোনার প্রাদুর্ভাব হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হয় ছয় মাসের জন্য। দুটি শর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন বিএনপি নেত্রী। এর একটি শর্ত হলো, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এরপর আরও তিন দফা ছয় মাস করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ান প্রধানমন্ত্রী।
তবে ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এবং বছরের শেষে অসুস্থ হয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হলে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানায় বিএনপি। গত শনিবার প্রথম প্রহরে তিনি আবার হাসপাতালে ভর্তি হলে একই দাবি তুলছে দলটি।
সরকার এই দাবি নাকচ করে বলেছে, দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এই ধারা একই ব্যক্তির ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বারের মতো প্রয়োগের সুযোগ নেই।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা হাজি সেলিম অনেকটা গোপনে বিদেশে গিয়ে আলোড়ত তোলেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারাদণ্ডের আদেশ পরে হাইকোর্টে বাতিল হলেও এরপর আপিলে সেই আদেশ বাতিল করে উচ্চ আদালত। এরপর হাজি সেলিমকে ২৫ মের মধ্যে আত্মসমর্পণের সময় বেঁধে দেয়া হয়।
এর মধ্যে হাজি সেলিম অনেকটা চুপিসারে দেশের বাইরে যান। এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাজি সেলিম আইন মেনেই দেশের বাইরে গেছেন।
পরে সেখান থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগ নেতা আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
সেলিমা রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকার দিনের ভোট রাতে করে প্রশাসনের সাহায্যে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছিল। আজকে তারা খালদা জিয়ার চিকিৎসা চায় না। কারণ, তারা জানে বেগম খালেদা জিয়া যদি বাইরে আসেন, তাহলে কোটি কোটি লোক তার পেছনে দৌড়াবে।
‘দেশের মানুষ একজন নেত্রীকে চেনেন, তিনি হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া, যিনি উন্নয়নের কর্মকার। যিনি পাঁচটি আসন থেকে জনগণের ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। সেই নেত্রীকে আজকে এই সরকার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আপনি যদি বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে চিকিৎসার সুযোগ না দেন, আপনারা যদি তাকে বাইরের না পাঠান; তাহলে সমস্ত জনগণ রাজপথে নামবে। শুধু ঢাকা শহরে নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ রাজপথে নামবে। সেদিন আপনি বুঝবেন। আপনার পায়ের তলায় মাটি নেই বলেই জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছেন।’
‘গণতন্ত্র রক্ষায় সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নাম খালেদা জিয়া’
নয়াপল্টনে কৃষক দল আয়োজিত অন্য একটি দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘এ দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নাম বেগম খালেদা জিয়া। আজকে তাকে দরকার আমাদের। তাকে পাশে পেলে আমাদের আন্দোলন আরও বেগবান হবে। সে কারণে সরকার তাকে মুক্তি দিচ্ছে না। তাই তার মুক্তির জন্য সরকারকে বাধ্য করতে হবে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ সময় বক্তব্য রাখেন।