জামালপুর সদর উপজেলার ইটাইল ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রাম। প্রকৃতির সবুজ চাদরে ঘেরা গ্রামটির বেশির ভাগ বাসিন্দা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুটি ইটভাটা।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, ফসলি জমি দখল করে গড়ে তোলা ইটভাটা ও এর বর্জ্যের কারণে আশপাশের পরিবেশ মারাত্মক দূষিত হচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় তাই মরছে কৃষি; মরছে প্রকৃতি। ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে।
ক্রমেই সবুজ প্রকৃতি বিবর্ণ হয়ে উঠছে। তামাটে রং ধারণ করছে ফসলি জমির মাটি। একটা সময় ফসলি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের জনজীবন। এখন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে আরও একটি ইটভাটা স্থাপনের প্রক্রিয়া।
তাই ইটভাটা স্থাপনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে গ্রামবাসী। গ্রামবাসীর পক্ষে ইটভাটা স্থাপন না করার অনুরোধ জানিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা।
মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আবেদনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শামছুল হক বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি ও ফসলের জমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপনের কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এবিসি ইটভাটা কর্তৃপক্ষ ভাটা স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছে। আমরা গ্রামে আর কোনো ইটভাটা চাই না।
‘ইটভাটার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, হচ্ছে। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী টাকা ছিটিয়ে জোর পূর্বক এখানে ইটভাটা স্থাপনের পাঁয়তারা করছে।’
স্থানীয় কৃষক লিয়াকত মাস্টার বলেন, ‘গ্রামের দক্ষিণ দিকে বিস্তীর্ণ তিন ফসলি জমির মাঠ। একসময় এই জমি থেকে কয়েক লাখ মণ ধান ঘরে তোলা হতো। কিন্তু গ্রামে দুটি ইটভাটা হওয়ার পর তেমন ধান পাওয়া যায় না। এর মধ্যে নতুন করে আরও একটি ইটভাটা হলে আমাদের ধানের চাষ বাদ দেয়া লাগবে।’
গ্রামের আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই গ্রামের দুই ইটভাটার বর্জ্য নিয়ে আমরা অতিষ্ঠ। রাস্তা-ঘাটসহ ক্ষেতের নানা জায়গায় ইটভাটার বর্জ্য পড়ে থাকে। আশপাশের পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। আরেকটি ইটভাটা হলে আমাদের শ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে যাবে।’
ইটভাটা থেকে ১০০ গজ দূরে গ্রামে একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। প্রায় ৪০ বছর ধরে সেই নলকূপ থেকে ক্ষেতে পানি দেন গ্রামের চাষিরা। এমনিতেই এখানে পানির স্তর অনেক নিচে। এখন আরেকটি ইটভাটা হলে পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাবে। তখন কৃষকরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে বলে জানান স্থানীয় সিদ্দিক মিয়া।
তবে ইটভাটার ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গ্রামের কয়েকজন একজোট হয়ে শুধু শুধু আমার বিরোধিতা করছে। আগে ওই জায়গায় আমার একটি পুরাতন ইটভাটা ছিল, সেটিই আবার নতুন করে করছি।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও অনুমতি পাইনি, তবে ফাইল রেডি হচ্ছে।’
জামালপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এরপর কয়েকটি দপ্তর তদন্তে যায়। সেখানে দুটি ফসলি জমি আছে। আরও কিছু আইনি বিষয় রয়েছে। এসব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
‘কিছুদিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে, তবে কেউ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটা স্থাপনের চেষ্টা করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’