ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনের সামনের রাস্তায় এক তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে রোববার বিকেলে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
সমাবেশ থেকে সেই ঘটনায় জড়িতকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ক্যাম্পাসকে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে নিয়মিত মনিটরিংয়ের দাবি জানানো হয়।
হেনস্তাকারীকে চিহ্নিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সেই তরুণি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার রাতে রিকশায় ধানমন্ডিতে আমার ভাইয়ের বাসা থেকে পুরান ঢাকায় নিজের বাসায় যাচ্ছিলাম। আনুমানিক রাত ১২টা ১৭ মিনিট থেকে ১২টা ২২ মিনিটের মধ্যে নীলক্ষেত থেকে যখন টিএসসির দিকে ঢুকছিলাম, কলা ভবনের কাছাকাছি এই ঘটনাটি ঘটে।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি হেডফোনে গান শুনছিলাম। আমার রিকশার বাম সাইডে হঠাৎ বাইকে একটা লোক এসে আমার বুকে হাত দেয় এবং খুব জোরে টান দেয়। জোরে টান দিলে আমার জামাটা ছিঁড়ে যায়।
‘ওই লোক যাওয়ার সময় রাগান্বিত চোখে আমাকে কিছু একটা বলতে বলতে যাচ্ছিল। তখন রিকশাওয়ালাকে বলেছিলাম ওনাকে আটকানোর জন্য। কিন্তু তাকে আটকানো সম্ভব হয় নাই এবং তিনি দ্রুত বাইক টেনে চলে যান।’
এই ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় মামলা করেন সেই তরুণী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘করোনা থেকে আমরা মুক্তি পেলেও নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে মুক্ত হতে পারছি না। যারা নারীর প্রতি সহিংসতার মাধ্যমে পুরুষত্ব দেখান, তারা আসলে পুরুষত্বকে কলঙ্কিত করছেন। সব পুরুষ নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করেন না। যারা করে তাদের আইনের আওতায় আনার এই সংগ্রাম নারী, পুরুষ সবার।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবউজ্জ্বল কেন্দ্র। আমরা যখন শিক্ষার্থী ছিলাম তখন বাহির থেকে ক্যাম্পাসে ফিরলে মনে হতো আমরা নিরাপদ জায়গায় আছি। এখন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এই ধরনের কাজ করছে, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই তাদের চিহ্নিত করুন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান আপনার সম্মানের সঙ্গে জড়িত।’
ফাওজিয়া মোসলেম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সহিংসতাকারীদের হাত থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত রাখার আহ্বান জানান।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু পুরুষের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের নারীদের অবদান দেশে বিদেশে স্বীকৃত। কোনো ধরনের শিক্ষার ফলে ওই কাপুরুষ নারীর প্রতি এই ধরনের সহিংসতা দেখায়? আমরা বলছি পুরুষ নতুন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করুন,নতুন ধরনের মানুষ হন।
‘একজন নারীকে আপনারা মানুষ হিসেবে গ্রহণ করুন। সে আপনার অধীনস্থ না,পদানত না, এই শিক্ষায় আপনারা শিক্ষিত হোন। যদি তা না হয়, তাহলে একদিন আপনার পরিবারেও একই ঘটনা ঘটবে ‘
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সংগঠনটির আন্দোলন উপপরিষদের অ্যাডভোকেসি লবির পরিচালক জনা গোস্বমী ১১ টি প্রস্তাব পেশ করেন।
প্রস্তাবগুলো হলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নারী নির্যাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি, নারী-পুরুষ ঐক্যবদ্ধভাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে এগিয়ে আসা, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তুলা, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার নারীকে দায়ী করার মানসিকতা পরিহার করা, উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে পৃথক আইন প্রণয়ন করা, ধর্ষণসহ নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধে সরকার ঘোষিত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান করা, নারীর প্রতি প্রচলিত নৈতিবাচক প্রথা ও রীতিনীতি অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার-প্রচারনা চালানোর আহ্বান।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক দীপ্তি সিকদারের সঞ্চালায় সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, মাসুদা রেহানা বেগম, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের সম্পাদক রেখা সাহা, উপপরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি এবং ডা. নাহীদ নবী লেখা বক্তব্য দেন।