‘সয়াবিন তেল যখন ৩২ টাকা লিটার ছিল তখন সিঙারা, চপ, পেঁয়াজুর ব্যবসা শুরু। বিয়ের আগে থেকেই এই ব্যবসা শুরু করি। শুরুর দিকে একটি সিঙারার দাম ছিল ২৫ পয়সা। এরপর বিভিন্ন সময়ে উপকরণের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সিঙারার দামও ৫০ পয়সা করা হয়। এরপর থেকে টানা ২২ বছর এক টাকায় সিঙারা বিক্রি করছি।’
বর্তমানে সব কিছুর দাম কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে গেছে। তবু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষকে এই সেবাটা দিতে চান বলে জানালেন সিঙারা বিক্রেতা অসিত কুমার সাহা।
মাগুরা জেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে শ্রীপুর উপজেলা। এর মধ্যবর্তী জায়গাটি গাঙনালিয়া বাজার। এই বাজারে সিঙারা বিক্রেতা বলে পরিচিত অসিত কুমার। শত বছরের প্রাচীন এই বাজারে এক টাকার সিঙারা অন্য রকম পরিচিতি বাড়িয়েছে গাঙনালিয়াকে। জেলা সদর থেকে উপজেলায় অনেক পেশাজীবী মানুষকে এই মাঝ পথে গাংনালিয়া বাজারে থামতে হয়। সঙ্গে চলে সব থেকে কম দামে এই বিশেষ খাবারের স্বাদগ্রহণ।বিক্রেতা অসিত কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বড় ছেলে এখন আমাকে সাহায্য করে। তবে সিঙারা ও চপ বিক্রি করে এখন আর আগের মতো লাভ নেই। বিশেষ করে বর্তমান তেল, আটা ও ময়দার দাম বেশি। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামও বাড়তি। সব মিলিয়ে আগের মতো ব্যবসাটা আর নেই।
‘দামে সাশ্রয়ী ও সুস্বাদু হওয়ায় মানুষের কাছে এই সিঙারার ব্যাপক চাহিদা। লাভ সীমিত হলেও বেশি বিক্রি হয় বলে আমাদের পুষিয়ে যায়। তবু মানুষকে এই এক টাকায় সেবা দিয়ে যাব। এটাই আমার ইচ্ছা।’
সিঙারার পাশাপাশি আলুর চপ, ছোলা ভুনা ও পেঁয়াজুসহ অন্যান্য খাবারও বিক্রি হয়। ছেলেরা অন্য কাজে থাকলে মাঝে মাঝে তাকে সব সামলাতে হয় বলে জানান অসিত।
তিনি বলেন, ‘সপ্তাহের পাঁচ থেকে ছয়দিন বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি চলে। প্রতিদিন গড়ে সাতশ’ সিঙারা বিক্রি হয়। ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি চাপ থাকে হাটের দুই দিনে।’ছোলা ভুনা, চপ ও সিঙারা খাচ্ছিলেন শ্রীপুর কলেজের শিক্ষার্থী শাহাজাহন। তিনি জানান, বন্ধুরা মিলে সুযোগ পেলেই এখানে এসে তেলে ভাজা বিভিন্ন খাবার খান । শাহজাহান বলেন, ‘এখন একটা হোটেলে সিঙারার দাম প্রতি পিস ৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০ টাকা। কম দামে এই সিঙারা বন্ধুরাসহ খেতে প্রায়ই শ্রীপুর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এই বাজারে আসি।’
অসিত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা সময় সিঙারা-চপ বিক্রি করে সম্পদ করেছি। এখন তা আর হচ্ছে না। যা আয় হয় তাতে সংসারের খরচ মেটাতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। শুধু আমার এক টাকার সিঙারা ও চপ বাড়েনি। অনেকে বলেন দাম বাড়াতে। কিন্তু আমার ইচ্ছা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যত কিছুর দাম বাড়ুক না কেন আমি এক টাকা করেই সিঙারা বিক্রি করে মানুষকে খাওয়াব।’