বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যাত্রী সেজে দেড় বছরে ১৫ ডাকাতি-ধর্ষণ

  •    
  • ১২ জুন, ২০২২ ১৫:৫৪

‘ডাকাত চক্রটি দেড় বছরে যাত্রীবেশে মহাসড়কে ১৫টির বেশি ডাকাতি করেছে। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।’

সম্প্রতি ঢাকার আশুলিয়ায় হানিফ পরিবহন ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্টার লাইন পরিবহনের বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ওই দুটি ঘটনাসহ বিভিন্ন সময়ে দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আন্তজেলা ডাকাত চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে শনিবার রাতে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮-এর একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন ওই ডাকাত চক্রের সর্দার হিরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখ, হাসান মোল্লা ওরফে ইশারত মোল্লা, আরিফ প্রামাণিক ওরফে আরিফ হোসেন, নুর ইসলাম, রাজু শেখ ওরফে রাজ্জাক, রেজাউল সরকার, মো. রতন, শরিফুল ইসলাম, মো. হানিফ ও নজরুল ইসলাম।

ওই সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলি, আটটি দেশি অস্ত্র, শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের চারটি টিকিট ও তিনটি ব্যাগ জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা ঢাকা-রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিলেন।

কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘ডাকাত চক্রটি দেড় বছরে যাত্রীবেশে মহাসড়কে ১৫টির বেশি ডাকাতি করেছে। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

‘কারাগারে গিয়ে তারা জামিন নিয়ে এসে আবারও ডাকাতির কাজে লিপ্ত হন। এ ছাড়া ঢাকা-দিনাজপুরগামী একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটান তারা।’

গত ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জগামী স্টারলাইন পরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ জুন ডাকাত মহব্বত ওরফে রয়েলকে লুণ্ঠিত মালামালসহ রাজশাহী থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব কমান্ডার বলেন, ‘রয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব গোয়েন্দারা বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনা সম্পর্কে তথ্য পায়। ডাকাত হীরার নেতৃত্বে এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটি গত এক মাসে তিনটি দূরপাল্লার বাসে ডাকাতি করে।

‘চক্রটি গত ১১ মে চট্টগ্রাম থেকে যশোর-বেনাপোলগামী হানিফ পরিবহন, ২৫ মে ঢাকা-রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস পরিবহন এবং ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা থেকে কোটালীপাড়াগামী স্টারলাইন পরিবহনে ডাকাতি করে।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে সৌদিয়া বাসে ডাকাতির সময় তারা বাসচালকের হাতে ও হেলপারের পেটে ছুরিকাঘাত করে। চক্রটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফাল্গুনী ট্রাভেলস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও কনক পরিবহন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সুরভী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, সিলেট-রাজশাহী মহাসড়কে শ্যামলী পরিবহন ও রইস পরিবহন, ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে পাবনা এক্সপ্রেস ও সরকার ট্রাভেলস, রাজশাহী-বরিশাল মহাসড়কে সেবা গ্রিনলাইন পরিবহন ও তুহিন পরিবহনে ডাকাতি করেছিল।

‘তিন বছর আগে ঢাকা-দিনাজপুরগামী একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ঘটনাও ঘটায় চক্রটি। সর্বশেষ তারা ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জগামী স্টারলাইন পরিবহনে ডাকাতি করে। ডাকাতির জন্য তারা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন দূরপাল্লার আন্তজেলা বাসগুলোকে টার্গেট করে। এ ক্ষেত্রে চক্রটির কয়েকজন আগে থেকেই কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার মাধ্যমে বাসে ওঠেন।’

যেভাবে করা হতো ডাকাতি

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য সদস্যরা পরবর্তী বিভিন্ন কাউন্টার থেকে টার্গেট করা বাসে ওঠেন। যেসব দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠায় তারা এসব বাসকে প্রাধান্য দিয়ে ডাকাতি করেন।’

র‌্যাব মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তারা মহাসড়কের নির্জন এলাকায় বাস ডাকাতির জন্য বেছে নিতেন। ডাকাতির পর তারা পুনরায় আশুলিয়ায় ফিরে আসেন। বিভিন্ন সময় তারা বাড়িঘরে ডাকাতি করতেন। ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার সবাই ডাকাতিসহ অন্যান্য মামলায় ২-৬ বছর মেয়াদে কারাভোগ করেছেন।’

ডাকাত সদস্যদের পরিচয়

গ্রেপ্তার ডাকাতদের সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হিরা শেখ এই ডাকাত চক্রের অন্যতম মূল হোতা। আগে তিনি গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে ডাকাতির পেশায় জড়িয়ে পড়েন এবং দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে ডাকাতি করেন।

‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি বাস ডাকাতি তার নেতৃত্বে হয়েছে। প্রত্যেকটি পরিবহনে ডাকাতিতে তিনি নিজে অংশ নেন। ডাকাতির সময় তিনি পরিবহনে উঠে প্রথমে বাস স্টাফদের এবং যাত্রীদের মারধর করে ভয় দেখান।

‘পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ও যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, মোবাইল এবং স্বর্ণালংকার লুট করতেন। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে ৭টি মামলা রয়েছে।’

হাসান মোল্লা ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী এবং দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে ডাকাতি করে আসছেন বলে জানান র‌্যাব কমান্ডার। জানান, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি বাস ডাকাতির পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ডাকাতির সময় তিনি পরিবহনে উঠে প্রথমে বাস স্টাফদের এবং যাত্রীদের মারধর করে ভয় দেখান। পরে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখতেন।

তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে ১০টি মামলা রয়েছে। নুর ইসলাম, হানিফ, আরিফ, শরীফ ও রতন এই চক্রের অন্যতম সদস্য। তারা পেশায় অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানচালকসহ অন্যান্য পেশার আড়ালে ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

গত ১০ বছর তারা বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছেন। ডাকাতির সময় তারা বাসের ড্রাইভারকে জিম্মি করে নিজেরাই বাসের ড্রাইভিং সিটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতেন।

গ্রেপ্তার আরিফ ও শরীফ চালক এবং সুপারভাইজারকে অস্ত্রের মুখে গাড়ির পেছনের সিটে হাত-পা বেঁধে রেখে পাহারা দিতেন। গ্রেপ্তার শরীফ ৮ থেকে ১০ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছেন। তার নামে বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধে ৮টি মামলা রয়েছে। আরিফের নামে দস্যুতার মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার নুর, হানিফ ও রতন ডাকাতির সময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের মালামাল লুট করতেন। নুরের নামে ডাকাতি, অস্ত্র, বিস্ফোরক আইনে বিভিন্ন থানায় ৪টি মামলা রয়েছে। হানিফের নামে ডাকাতি ও মাদক আইনে ২টি মামলা রয়েছে। রতনের নামে ডাকাতি ও মাদক আইনে বিভিন্ন থানায় ৫টি মামলা রয়েছে।

এর আগে তারা এসব মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এ ছাড়া রাজু ও রেজাউল এই চক্রের অন্যতম সদস্য।

রাজু দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছেন। তার নামে অস্ত্র ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৩টি মামলা রয়েছে। তিনি ডাকাতির সময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের মালামাল লুট করতেন। রেজাউল ডাকাতির সময় গাড়ির গেটে পাহারা দিতেন। তার নামে মাদক, ডাকাতি, ছিনতাই ও অস্ত্র আইনে মোট ৬টি মামলা রয়েছে।

পরিবহনে ডাকাতির সময় তারা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন এবং স্বর্ণালংকার লুটের কাজ করতেন। গ্রেপ্তার নজরুল ডাকাত দলটির লুটকৃত স্বর্ণ কিনে সেগুলো গলিয়ে বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করতেন।

গ্রেপ্তার আসামিদের নামে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এ বিভাগের আরো খবর