বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা মেরামত ভ্যানচালকের

  •    
  • ১২ জুন, ২০২২ ১৩:১৬

পূর্বধলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, ‘ওই সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় আমি উজ্জ্বল বাবুর্চিকে কাজ করতে দেখেছি। এটি তার নতুন উদ্যোগ না। এর আগেও তিনি পূর্বধলার কয়েকটি রাস্তায় এভাবে সংস্কার কাজ করেছেন। তিনি সত্যিকারের একজন স্বেচ্ছাসেবক এবং মহৎপ্রাণ মানুষ।’

পিচের প্রলেপ উঠে গেছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। সামান্য বৃষ্টিতেই তা একাকার হচ্ছে কাদাপানিতে। ময়লা পানি ছিটকে নষ্ট হচ্ছে পথচারীর কাপড়চোপড়। গাড়ি উল্টে ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব কারণে যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটে চলাও দায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের আশায় বসে না থেকে ভাঙা সড়ক মেরামত শুরু করেছেন ভ্যানচালক উজ্জ্বল বাবুর্চি।

নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলা সদরের রেলস্টেশন থেকে পূর্বধলার মূল বাজার পর্যন্ত ভাঙা সড়ক নিজ উদ্যোগে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করছেন উজ্জ্বল। উপজেলা সদরের অনেক বাসিন্দা প্রতিদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার এ কাজ দেখছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) স্থানীয় প্রকৌশলী সাদিকুল জাহান রিদানও নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।

উজ্জ্বলের বাড়ি পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের পূর্ব-বুধি গ্রামে। ভ্যান চালানোর পাশাপাশি তিনি মাঝেমধ্যে বাবুর্চির কাজও করেন। এ কারণে তিনি উজ্জ্বল বাবুর্চি নামেই পরিচিত। বয়স প্রায় ৫০।

রোববার সকালে ওই সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, নিজের ভ্যানগাড়ির সাহায্যে কিছু পরিত্যক্ত ইট এনে জড়ো করেছেন উজ্জ্বল। এরপর রাস্তার পাশে বসে হাতুড়ি দিয়ে সেগুলো ভেঙে সুরকি বানাচ্ছেন। পরে আবার সুরকিগুলো রাস্তার গর্তে বিছিয়ে ওপরে কিছুটা বালুর স্তর দিচ্ছেন। প্রশ্ন করলে জানান, বিভিন্ন সরকারি অফিসে থাকা পরিত্যক্ত ইট ও বালু সংগ্রহ করে প্রথমে জড়ো করেছেন তিনি। এরপর সেগুলো দিয়ে সুরকি বানিয়ে সড়ক মেরামত করছেন।

কেউ দায়িত্ব দিয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘না, আমি নিজ উদ্যোগেই এটি মেরামত করছি। কারণ এটি পূর্বধলা উপজেলা সদরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। প্রতিদিন হাজারও লোক এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। ‘কিন্তু রাস্তাটি বেশ কিছুদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে মানুষের চলাচলে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করেই আমি এখানে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছি। এ জন্য কেউ আমাকে দায়িত্ব দেয়নি বা কোনো পারিশ্রমিকও দেননি।’

উজ্জ্বল বলেন, ‘রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে মেরামত করার সাধ্য আমার নাই। আমি শুধু বড় বড় গর্ত ভরাট করে কিছুটা চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করছি, যাতে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমে। সম্পূর্ণ মেরামত করতে হলে অনেক টাকা দরকার। সেটা পরবর্তী সময়ে কর্তৃপক্ষ করবে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন সড়কটি প্রায় দুই-আড়াই বছর আগে সর্বশেষ মেরামত করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সাদিকুল জাহান রিদান বলেন, ‘আগে সড়কটির পাশে একটা সরু ড্রেন ছিল। এলাকাবাসী ময়লা-আবর্জনা ফেলে সেটি বন্ধ করে ফেলেছে। এ কারণে বৃষ্টির পানি সরতে পারে না। ‘পানি জমে থাকার কারণেই পিচের প্রলেপ উঠে গেছে। অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কারের জন্য আমরা নতুন করে প্রকল্প-প্রস্তাব তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।’

স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতের উদ্যোগ নেয়ায় উজ্জ্বল বাবুর্চিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রকৌশলী রিদান বলেন, ‘রাস্তা নির্মাণ করা হয় জনসাধারণের জন্য। তাই সেটি রক্ষার দায়িত্বও তাদের। সরকারি সম্পদ রক্ষায় নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। উজ্জ্বল বাবুর্চি সেই কাজটিই করছেন।’

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্বধলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, ‘ওই সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় আমি উজ্জ্বল বাবুর্চিকে কাজ করতে দেখেছি। এটি তার নতুন উদ্যোগ না। এর আগেও তিনি পূর্বধলার কয়েকটি রাস্তায় এভাবে সংস্কারকাজ করেছেন। তিনি সত্যিকারের একজন স্বেচ্ছাসেবক এবং মহৎপ্রাণ মানুষ।’

মোস্তাক আরও বলেন, ‘রাস্তার সব গর্তই প্রথমে ছোট থাকে। আস্তে আস্তে তার আকার বড় হয়। ছোট গর্তগুলো ভরাট করে দিলে বড় আকার ধারণ করে না। কিন্তু আমরা লক্ষ করি, গর্তগুলো বড় হলে চলাচলের উপযোগী থাকে না। তখন পুনরায় রাস্তা মেরামত করা হয়। এতে অর্থের যেমন অপচয় হয়, তেমনি জনসাধারণেরও কষ্ট ভোগ করতে হয়। উজ্জ্বল মাঝেমধ্যে এ কাজগুলোই করেন।’

এ বিভাগের আরো খবর