দিঘির শহর হিসেবে পরিচিত সিলেট থেকে একে একে হারিয়ে যাচ্ছে সব দিঘি। এই তালিকায় ছিল বন্দরবাজার এলাকার ধোপাদিঘিও। দখলে ও দূষণে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল এটি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা এই দিঘি পেয়েছে নান্দনিক রূপ।
‘ধোপাদিঘি এরিয়া ফর বেটার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড বিউটিফিকেশন’ প্রকল্পের আওতায় ভারত সরকারের অর্থায়নে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে দিঘি উদ্ধার করে চারপাশে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। নির্মাণ করা হয়েছে দুটি ঘাট। সেই সঙ্গে করা হয়েছে আলোকসজ্জা।
সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষে শনিবার দুপুরে এর উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিক ও সমতার উন্নয়নে সিলেট সিটি করপোরেশন যথাযথ ভূমিকা রাখছে। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন, দূরদর্শী ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়ায় সিলেট মহানগরবাসী নানা সুবিধা পাচ্ছে।
‘সরকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় রাজনৈতিক বিবেচনা করে না। সারা দেশে সমতা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন ধারাবাহিকতা চলমান।’
সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটের রাস্তাঘাট মেরামতে বিশেষ সহযোগিতার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
উদ্বোধনের পর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় দিঘিটি। বিকেল থেকে এখানে ঘুরতে আসেন নানা শ্রেণির মানুষ।
ঘুরতে এসে নগরের যতরপুর এলাকার সায়মা হক বলেন, ‘চারদিক দখল হয়ে যাওয়ায় এখানে যে এত বড় একটা দিঘি ছিল তা দেখাই যেত না। সেই সঙ্গে এটা পরিণত হয়েছিল ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে।
‘এই দিঘি উদ্ধার করে ওয়াকওয়ে বানানোয় এখন নগরবাসী হাঁটার ও ঘোরার সুযোগ পাবে। ওয়াকওয়ের জন্য কেউ আর পাশ থেকে দখলও করতে পারবে না।’
সিটি করপোরেশন জানায়, ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করে। আগে দিঘির জায়গা ছিল ৩ দশমিক ৪১ একর। চারপাশের দখল হওয়া জায়গা উদ্ধারের পর এখন এর সীমানা হয়েছে ৩ দশমিক ৭৫ একর।
জায়গা উদ্ধারের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় ধোপাদিঘির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, দিঘির পারে বসার জন্য বেঞ্চ রাখা হয়েছে, পাবলিক টয়লেট বানানো হয়েছে। এখন পুকুরের নোংরা পানি পরিষ্কার করা হচ্ছে। নৈসর্গবিদদের পরামর্শে গাছ লাগানো হবে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, দুই মন্ত্রী ও হাইকমিশনার শনিবার ধোপাদিঘি ওয়াকওয়ের পাশাপাশি আরও তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। ওই দুই প্রকল্প হলো ছয় তলাবিশিষ্ট চারাদিঘির পার স্কুল ও কাস্টঘর সুইপার কলোনি। তিনটি প্রকল্পই ভারতীয় সরকারের অর্থায়নে হয়েছে।
এ বিষয়ে মেয়র জানান, ধোপাদিঘি রক্ষা করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতেই মূলত সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নেয়া। দিঘি খনন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, পাড় বাঁধানো ও ঘাট তৈরি করা ছিল এ প্রকল্পের মূল কাজ।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বপ্ন ছিল সিলেট নগরবাসীর হাঁটাচলার জন্য একটি নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলা। আমরা সেই চেষ্টাই করছি। এর অংশ হিসেবে ধোপাদিঘিকে সাজানো হয়েছে।
‘দিঘি এলাকা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এর প্রবেশপথ থাকবে সিটি করপোরেশনের মসজিদের উত্তর পাশে। রাতে আলোকসজ্জা থাকবে। ফলে নগরবাসী যেকোনো সময় এখানে এসে হাঁটাচলা করতে পারবেন।’