বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতে অসুস্থ নাবিক রাশেদকে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

  •    
  • ১১ জুন, ২০২২ ২০:৩১

রাশেদের কর্মস্থল চট্টগ্রামের এসআর শিপিং লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম টুটুল জানান, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় গত ৩১ মে রাশেদকে মুম্বাইয়ের জেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সুনসান নীরবতা। বাইরে বইছে ভোরের কোমল বাতাস। শনিবার এমনই একসময়ে কফিনবন্দি হয়ে বাড়ির সীমানায় পৌঁছান রাশেদ। এ সময় তার স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।

মুম্বাইয়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মনিতে অবস্থান করা অবস্থায় রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে নাবিক আবু রাশেদের। সংসারের অভাব ঘোচানোর স্বপ্ন নিয়ে নাবিকের চাকরি নেয়া রাশেদের এমন মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমারঘাটা গ্রামে রাশেদের বাড়ি। তিনি ওই এলাকায় কৃষক আব্দুর সবুর সরদার ও গৃহিণী পারুল বেগমের ছেলে। দুই সন্তানের মধ্যে রাসেল ছোট।

গত মার্চে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি জাহাজ মনিতে ডেক ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন রাশেদ। বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমির ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। গত ৩০ মে ভারতের মুম্বাই বন্দরের জলসীমায় নোঙর করা অবস্থায় এমভি জাহান মনি জাহাজে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ মে সকালে তার মৃত্যু হয়।

স্বজন, সহকর্মী ও পরিবারের অভিযোগ- দুই মাস ধরে জাহাজে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় একটি হাসপাতালে রাশেদের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করে বিচারের দাবি তুলেছেন তারা।

শনিবার সকালে রাশেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছে। উঠানভর্তি মানুষ। কেউ রাশেদের বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, কেউ তার মাকে। ছেলের মৃত্যুর খবরে অনেকটা নির্বাক বাবা আব্দুর সবুর সরদার। ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে ছিলেন ছেলের কফিনের দিকে।

একপর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে সবুর সরদার বলেন, ‘আমার আব্বুরে কী কষ্ট দিয়ে মেরেছে। মুখে-সারা শরীরে কোনো দাগ ছিল না; এখন সারা শরীর-মুখে দাগ।’

রাশেদের বাবাকে শান্তনা দিচ্ছেন স্বজন-প্রতিবেশীরা

বিরামহীন বিলাপ করছিলেন মা পারুল বেগমও। ১০ দিন ধরে অবিরাম কান্নায় তার দুই চোখের সব জল যেন শুকিয়ে গেছে।

চাপাস্বরে পারুল বলেন, ‘মৃত্যুর আগের দিন আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে অসুস্থ তার পরও আমাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলেছে- আমি ভালো আছি।

‘তবে রাশেদের কথার স্বর শুনে আমি বুঝে ফেলেছিলাম ও ভালো নেই। আমাদের সব স্বপ্ন শেষ!’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলেরে না জানি কীভাবে নির্যাতন করে মেরেছে ওরা।’

রাশেদের বড় ভাই রাসেল দাবি করেছেন, মাসখানেক আগে রাশেদ তাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘ভাই আমার খুব জ্বর এসেছে। ওরা আমারে চিকিৎসা করাচ্ছে না। ছুটি চাইলে তারা বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আমাকে আরও অসুস্থ করে ফেলছে। তুই দেখ আমাকে কোনোভাবে ছুটির ব্যবস্থা করে দিতে পারিস কি না।’

একপর্যায়ে রাশেদ ওই এমভি জাহান মনির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ছুটি চাইতে গেলে তারা রাশেদকে বলে, ‘তোর লাশ যাবে এই জাহাজ থেকে; কোনো ছুটি হবে না।’

রাসেলের আরও অভিযোগ, রাশেদ কোনো কর্মকর্তার কাছে ছুটি চাইলে ছুটির বদলে তাকে বেশি বেশি ওভারটাইম করাত। বিভিন্ন ইনজেকশন দিত। ইনজেকশন দেয়ার ফলে তার রক্তবমিও হতো।

রাসেল বলেন, ‘দিন দিন শরীর খারাপ হতে থাকলে রাশেদ বুঝতে পারে সে আর বাঁচবে না। তাই গ্রামের আত্মীয়স্বজনের কাছে ফোন করে মাফ চেয়ে নিয়েছে।’

রাসেল জানান, জাহাজে কর্মরত অবস্থায় সমুদ্রে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতকালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেছে বলে বিভিন্ন সময়ে ফোনে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন রাশেদ।

তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি করছি। তার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের শাস্তি ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

রাশেদের বড় ভাই রাসেল

এলাকাবাসীর কাছেও রাশেদ ছিলেন শান্ত, নিরহংকারী যুবক। ছোটবেলা থেকেই গ্রামের সবার সঙ্গে মিশতেন, হাসিমুখে কথা বলতেন। খেলাধুলাপাগল ছিলেন। অ্যাকাডেমিতে গিয়েও সব ধরনের খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাশেদের অ্যাকাডেমির সিনিয়র বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, অনবোর্ড হওয়ার পর থেকেই আবু রাশেদকে কাজের অনেক চাপ দেয়া হতো। ভোর ৪টা থেকে টানা রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে একটানা ডিউটি করতে বাধ্য করা হতো। এর ফলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের দিকে সে জ্বরে আক্রান্ত হয়।’

ওই সিনিয়র জানান, জ্বরের জন্য রাশেদকে তিন দিন জাহাজে আইসোলেটেড করা হয়। পরে জ্বর কমলে আবারও প্রতিদিন তাকে ১৬-১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে বাধ্য করা হয়। গত সপ্তাহে জাহেদ গুরুতর অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ডিউটিতে যেতে বাধ্য করা হয়।

তিনি আরও জানান, গত ৩০ মে মুম্বাই বন্দরে জাহাজটি অ্যাংকর লোড করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যান রাশেদ। এ সময় তার রক্তবমি শুরু হয়। পরে তাকে মুম্বাইয়ের শোরে হসপিটালে আনা হয়। এরপর ৩১ মে তিনি মারা যান।

নাবিক আবু রাশেদের মরদেহ শনিবার ভোরে গ্রামে নিয়ে আসে তার কর্মস্থল চট্টগ্রামের এসআর শিপিং লিমিটেড। কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম টুটুল জানান, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় গত ৩১ মে রাশেদকে মুম্বাইয়ের জেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

রাশেদের পরিবারের অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবই মিথ্যা।’

এ ছাড়া কোম্পানি থেকে রাশেদের পরিবারকে যেকোনো সহযোগিতা দেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর