সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসাধীন এক কলেজছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বরিশাল শের-ই-বাংলা-মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজন, বন্ধু ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার অভিযোগ উঠেছে।
রোগীর স্বজনদের দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পরও চিকিৎসা দেয়া হয়নি।
অন্যদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে রোগীর। তাকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। এর পরও হামলা করা হয়েছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ তলার সার্জারি-১ ইউনিটে শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
বরিশাল ইসলামিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ মোটরসাইকেলে দুই বন্ধু হৃদয় ও ওসমান গনিকে নিয়ে ইসলামিয়া কলেজ থেকে তালতলী যাচ্ছিল।
পথে মহাবাজ এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর আহত তিন বন্ধুকে স্থানীয়রা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি-১ ইউনিটে ভর্তি করেন।
এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রিয়াদের। বাকি দুজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কী বলছেন স্বজনরা
রিয়াদের স্বজন মাসুদ ও তনু বলেন, হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা একজন একজন করে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। আমরা বারবার বলছিলাম, রিয়াদের অবস্থা বেশি খারাপ, কিন্তু তারা কথা শোনেনি। রিয়াদকে চিকিৎসা না দেয়ায় মারা যায়।
এরপর রিয়াদের বন্ধুদের সঙ্গে ইন্টার্নদের হাতাহাতি হয়। এর কিছুক্ষণ পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসে স্বজনদের মারধর করে।
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা
সার্জারি ইউনিটে দায়িত্ব পালন করা ইন্টার্ন চিকিৎসক অর্ণব খান বলেন, ‘রোগী মারা যাওয়ার পর কলেজ ইউনিফর্ম পরা মৃতের বন্ধুরা এসে ডাক্তারদের রুমে হামলা চালিয়ে আলমিরাসহ নানা আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। রুমে থাকা দুই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে শ্লীতাহানির চেষ্টা করলে অন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বাধা দিলে তাদের মারধর করা হয়।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিন বলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে ওই রোগীকে বাঁচানোর জন্য। তার পরও মৃতের স্বজন ও বন্ধুরা আমাদের ওপর হামলা করেছে।
‘তারা হুমকি দিয়েছে আমাদের। এই ঘটনার সমাধান না হলে, বিচার না হলে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যাব।’
হাসপাতাল পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত তিনজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর মধ্যে যে মারা গেছে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর রোগীর স্বজনদের এমন আচরণ কাম্য নয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনায় বসেছি।’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক লোকমান হোসেন বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে এসেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’