আগামী ১ জুলাই থেকে ঢাকা শহরে রাত ৮টার পর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেস্তোরাঁ ও অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া বাকি সবকিছু বন্ধ রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি।
সেমিনারে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, অ্যাডাপটেশন অফ আরবান এরিয়াস টু ক্লাইমেট চেইঞ্জের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ড. ডানা দে লা ফনটেইম এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।
সেমিনারে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার (ন্যাপ) উপর বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত।
মেয়র তাপস বলেন, ‘ঢাকার জন্য কী ধরনের বনায়ন প্রয়োজন তা আমাদের বিবেচনা করা দরকার। আমরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। কেন ঢাকাতে এডিশ মশার বিস্তার হয় তা নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। আমি এ বিষয়ে কাজ করার জন্য গবেষকদের অনুরোধ জানাব। এডিশ মশা ধ্বংসের জন্য আমরা শুধু কীটনাশক দিই তা নয়, আমরা পরিবেশবান্ধব ও জীববৈচিত্র্য উপযোগী ঢাকা শহর গড়তে চাই। আপনারা তিনটি করে গাছ লাগান। একটি কদম ফুলের গাছ লাগান। কদম ফুলের গাছে এমন কিছু পাখি আসে যেগুলো কীটপতঙ্গ খেয়ে পরিবেশকে ঠিক রাখে।’
তিনি বলেন, ‘সব শহরের দোকানপাট খুলে রাখার নির্দিষ্ট সময় আছে, কিন্তু ঢাকার কোন সময় নেই। করোনার সময়ে ঢাকা শহর যখন স্বস্তি পেল, তখন দেখলাম প্রকৃতি জেগে ওঠেছে। ঢাকা সবুজ ও ধুলামুক্ত হয়েছে। জনজীবন নিস্তব্ধ হয়ে গেলে প্রকৃতি তার উৎকর্ষতা সাধন করতে পারে।’
মেয়র তাপস বলেন, ‘আগামী পহেলা জুলাই থেকে রাত ৮টার পর ঢাকা শহরের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তবে রেস্তোরাঁ ও অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দোকার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকবে। শহরকে বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই প্রকৃতি জেগে উঠতে পারবে; ভোরবেলা দেখবো সুন্দর শহর।’
শুধু ঢাকায় কাজ নয় বরং উপভোগ করার জন্য পয়মুক্ত ঢাকা গড়তে সকলকেই সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তাপস।
বক্তব্যে বুয়েট উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। আমরা যদি পরিকল্পনামাফিক আগাতে না পারি, তাহলে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুর্যোগ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।’
অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে চরম উষ্ণতা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, নদ-নদী সৃষ্ট বন্যা, নদী ভাঙন, খরা, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধ্বস, তীব্র শীত, বজ্রপাত, শহরাঞ্চলের বন্যা এবং সমুদ্রের অম্লায়ন।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) প্রণয়নে স্থানীয় অভিযোজন প্রক্রিয়া ও কৌশলের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ একটি জলবায়ু সহনশীল দেশে পরিণত করতে ১১০টি কর্মকাণ্ড প্রস্তাব করা হয়েছে। ন্যাপ প্রণয়ন ও এর সফল বাস্তবায়নে সবাইকে কাজ করতে হবে।’
চূড়ান্ত ন্যাপ স্থানীয় ও খাত ভিত্তিক অভিযোজন চাহিদা নিরূপণ ও এর অর্থায়ন কৌশল নির্দেশ করার পাশাপাশি তা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আন্ত-প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় ও খাত ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আইনুন নিশাত।