চার দিনের ব্যবধানে রাজধানীর দুই জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। এতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসিসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন, ভাঙচুর করা হয়েছে ট্রাফিক বক্স।
এসব হামলার পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলে ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে গোয়েন্দারা কাজ করছে বলেও জানান তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনো বাহিনীর তুলনায় পুলিশ জনগণের কাছাকাছি থাকে। যে কারণে জঙ্গি থেকে শুরু করে স্বার্থান্বেষী মহল সহজেই পুলিশকে টার্গেট করে। পুলিশের উপর হামলা করে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে ফায়দা লুটতে চায়।
এই ধরণের হামলা ঠেকাতে আরও সতর্ক থাকা এবং দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলার কথাও জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতনরা।
গত মঙ্গলবার সকালে জুরাইন পুলিশ বক্সের পাশে উল্টোপথে আসা এক যাত্রীকে থামানোকে কেন্দ্র করে পুলিশের তিন সদস্যকে মারধর ও ট্রাফিক বক্স ভাঙচুর করা হয়।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই শুক্রবার দুপুরে ঢাকা উদ্যানে মুসল্লীদের ভেতর থেকে কয়েকজন যুবক মোহাম্মদপুর থানার ওসি ও একজন সহকারী পুলিশ পরির্দশক পদবির একজনকে মারধর করে।
জুরাইনে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ৩৫০-৪৫০ জনকে আসামি করে শ্যামপুর থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি।
সে ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেপ্তারের কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার ঢাকা উদ্যানে হামলার ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশের উপর হামলার এই দুই ঘটনা স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনেই হয়েছে বলে মনে করেন ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ‘জুরাইনে একজন উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে আসল, আর তার কাছে কাগজ দেখতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলা হয়। মুহূর্তে শতশত লোক জড়ো করে পুলিশ সদস্যদের মারধর ও ট্রাফিক বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। এটা স্পষ্ট, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনেই হামলা হয়েছে। আমরা এই ইন্ধনতাদের বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। ইতিমধ্যে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
ঢাকা উদ্যানে মোহাম্মদপুর থানার ওসির উপর হামলার পেছনেও অশুভ শক্তির ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন ডিবি প্রধান।
হামলার বিষয়ে ডিএমপি মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে ঢাকা উদ্যানে স্থানীয়দের একটি সংগঠন থেকে বিক্ষোভ করার প্রস্তুতি নেয়। তখন ওসি সাহেব তাদের দ্রুত সময়ে কর্মসূচি শেষ করার কথা বলেন। চলে আসার সময় কয়েকজন যুবক হামলা করে।’
তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে আমরা কাজ করছি।’
ডিএমপির অপরাধ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ সাধারণ মানুষের সবচেয়ে কাছে থাকে, তাই সহজেই পুলিশকে টার্গেট করা হয়। পুলিশকে আক্রান্ত করে একটা মহল ফায়দা নিতে চায়। এ ধরনের হামলা প্রতিহত করতে আমাদের আরও সতর্ক এবং কৌশলী হতে হবে।’
ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই হামলাগুলোর পেছনে ইন্ধনদাতা আছে। ইন্ধন ছাড়া তো পুলিশের গায়ে সাধারণ মানুষ হাত দেবে না। যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’