জমিজমা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে বরিশালের নিলয় পারভেজ রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর। আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয় চলতি বছরের ১১ মার্চ। সেই অভিযোগপত্রেই বেধেছে বিপত্তি। এতে তার বিরুদ্ধে আরও সাতটি মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে মামলাগুলো অন্যের নামে।
তদন্ত কর্মকর্তার এই কাণ্ডে তিন দিন কারাবাসের পাশাপাশি চাকরি হারাতে হয়েছে রুবেলকে।
মামলার বাদীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এসআই শহীদুল ইসলাম এই অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন রুবেল। গত ৮ জুন তদন্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে আইনি নোটিশ পাঠান রুবেলের আইনজীবী আজাদ রহমান।
তবে এসআই শহীদুল বলেছেন, তিনি থানার ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিডিএমএস নামে সফটওয়ার দেখে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনের কপি এসেছে নিউজবাংলার হাতে। তাতে দেখা গেছে, শুরুতে রুবেলের নাম ঠিক থাকলেও শেষে তার অন্য নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর সেই ব্যক্তির নামে থাকা মামলাগুলো রুবেলের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।
বরিশাল মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা লোকমুখে শুনেছেন অভিযোগ। তবে কেউ লিখিত দেয়নি। লিখিত দিলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যা ঘটেছে
রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে তিনি ও তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি বরিশালের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে চলমান।
চার্জশিটের শেষের অংশে নিলয়ের নামের জায়গায় অন্য আসামির নাম দেয়া হয়। ছবি: নিউজবাংলা
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই শহিদুল ইসলাম চলতি বছরের ১১ মার্চ অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে প্রথমে তার নাম ঠিক করে উল্লেখ করলেও শেষের দিকে নাম নিলয় পারভেজ রুবেলের বদলে মো. পারভেজ হাওলাদার, বাবার নাম মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার এবং ঠিকানা কাউনিয়া থানার পলাশপুর ৮ নং গুচ্ছগ্রাম উল্লেখ করা হয়।
রুবেলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাসহ সাতটি মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।
রুবেল বলেন, ‘চার্জশিটে পারভেজ হাওলাদারের মায়ের নাম উল্লেখ করেনি, তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি তার মায়ের নাম পারুল আক্তার। আর আমার মায়ের নাম নাহার আলম। আমার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার। আমরা নগরীর চাঁদমারী এলাকার বাসিন্দা।
‘আমার নাম ও আমার বাবার নামের সঙ্গে পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা ৭ মামলার আসামির নাম ও বাবার নাম কিছুটা মিল থাকায় এসআই শহিদুল আর্থিক সুবিধা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিটে বিভিন্ন থানায় হওয়া সাত মামলা অন্তর্ভুক্ত করে আমাকে সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।’
রুবেল জানান, অভিযোগপত্র জমা পড়ার পর তিনি ৯ মে আদালতে হাজির হলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাসুম বিল্লাহ তাকে কারাগারে পাঠান। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন কার্ড ও নাগরিক সনদপত্র দাখিলের পর ১১ মে জামিনে বের হন।
রুবেল বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের পানি শাখায় পাম্প অপারেটর পদে জিলা স্কুল পাম্পে কর্মরত ছিলাম আমি। এই চার্জশিটের কারণে করপোরেশন থেকে ১০ এপ্রিল আমাকে ফোন করে চাকরিচ্যুত করা হয়।’
আইনি নোটিশ
রুবেলের আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, ‘সিডিএমএস এ সার্চ দিয়ে নিলয় পারভেজ রুবেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেখা যায়নি। অথচ পারভেজ হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলার সার্চ দিলে আটটি মামলা দেখা গেছে।
‘অবৈধ উপায়ে লাভবান হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিলয় পারভেজ রুবেলকে আদালতে চিহ্নিত আসামি হিসেবে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমনটা করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।’
তিনি জানান, এসআই শহিদুল ইসলাম সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলেছেন তিনি। না দিলে আদালতে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন বলে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তার দায়সারা জবাব
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিডিএমএসে সার্চ দিয়ে যেটা পাওয়া গেছে, সেটাই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি জানান, কোনো আইনি নোটিশ তিনি পাননি।
দুজনের নাম তো এক না, তাহলে সেই ব্যক্তির নামের মামলা কীভাবে রুবেলের নামে উল্লেখ করলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘লিগ্যাল নোটিশ যদি পাঠায়, তাহলে সেটি পেলে বিস্তারিত বলতে পারব।’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক লোকমান হোসেন বলেন, ‘যদি আমাদের কোনো পুলিশ সদস্য এই ধরনের ঘটনা ঘটায় তাহলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বরিশাল মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার প্রলয় চিসিম বলেন, ‘যে বিষয়টি শুনেছি সেই বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি এখনও। আমাদের পুলিশ সদস্যরা অপরাধে যুক্ত হলে এবং তা প্রমাণিত হলে শাস্তি থেকে রেহাই নেই। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।’