টাঙ্গাইলে কিছু তরুণ-যুবক বখাটেদের উৎপাত বাড়ছেই। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার সামনে ও রাস্তাঘাটে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বখাটেরা দলবদ্ধ হয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রীদের ইভটিজিং, প্রেমের প্রস্তাব এবং কু-প্রস্তাব দেয়। রাজি না হলে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের সিরাজকান্দি দাখিল মাদ্রাসাছাত্রীদের আসা-যাওয়ার পথে স্বপন ও সাগরসহ বেশ কয়েকজন বখাটের উত্ত্যক্তের শিকার হয় ওই মাদ্রাসার ছাত্রীরা।
শুধু তাই নয়, ছাত্রীদের কমনরুমেও বখাটেরা উঁকি দেয়। এ নিয়ে মাদ্রাসার এক শিক্ষক প্রতিবাদ করলে উল্টো সেই শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়ে রড ও ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন বখাটেরা।
এর আগে গত ৫ মে উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের বানিয়াবাড়ি এলাকায় প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে যান ১৯ বছরের ফারুক শেখ।
পরে তাকে সিরাজগঞ্জের এক আত্মীয় বাড়িতে রেখে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ৭ মে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা ভূঞাপুর থানায় ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা করলে ফারুকসহ তার সহযোগী বিশাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেন ভূঞাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহিম ফয়সাল।
পরে ৮ মে তাদের টাঙ্গাইল আদালতে পাঠানো হয়।
এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ও গণসচেতনতার লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানা পুলিশ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে লাগানো হয়েছে সতর্কতামূলক পোস্টার।
শুক্রবার সকালে উপজেলার গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই পাশের গেটে গিয়ে এমন একটি সতর্কমূলক বার্তার লিফলেট দেখা গেছে।
পোস্টারে লেখা রয়েছে, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শুরু বা ছুটির সময় আশপাশের দোকানে আড্ডা এবং অহেতুক ঘোরাফেরা সম্পূর্ণ নিষেধ। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আজ থেকে যদি কোনো স্কুল-কলেজ বা মাদ্রাসার সামনে বখাটে ছেলে পাওয়া যায়, তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, রাস্তাঘাটে বা স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বখাটে ছেলেরা উত্ত্যক্ত ও ইভটিজিং করে। প্রতিবাদ করতে গেলে অপহরণ বা ধর্ষণের শিকার হতে হয়। তাই অনেক কিছু মেনে নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়।
তারা আরও জানান, স্কুলের গেটে পুলিশের সতর্কমূলক লিফলেট লাগানোর বিষয়টি সময়োপযোগী উদ্যোগ। এতে বখাটের উৎপাত কমে আসবে।
অভিভাবকরা জানান, পুলিশের এমন উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে পুলিশ তৎপর হলে বখাটেরা আর মেয়েদের ইভটিজিংয়ের সাহস পাবে না।
এ বিষয়ে গোবিন্দাসী স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের স্কুলে তিনটি গেট রয়েছে। যখন স্কুল শুরু বা ছুটি হয় তখন এদিক দিয়েই সব ছাত্র-ছাত্রী আসে। সেই সঙ্গে গেটের বাইরেই রয়েছে অনেক দোকানপাট। আর সে জায়গাগুলোতে বসে বখাটেরা আড্ডা দেয় ও হয়রানিমূলক কথাবার্তা বলে।
‘এর আগেও অনেককে শাসন করা হয়েছে। বখাটেদের পরিবারের খোঁজ নিয়ে তাদের অভিভাবকদের ডেকেও কথা বলা হয়েছে। এরপরও এগুলো থামছে না। তাই এখন পুলিশের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক খন্দকার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বাচ্চারা যখন স্কুলে আসে-যায়, বিশেষ করে মেয়েরা যখন যাওয়া-আসা করে তখন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে অবগত করা হয়। তারা সরজমিনে এসে দেখে গেছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় এমন ব্যানার লাগানো হয়েছে। এখন অবশ্যই এটার সুফল পাওয়া যাবে।
ভূঞাপুর থানার ওসি মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘বখাটেদের অপরামূলক কর্মকাণ্ড রোধে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমে গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে। বিট পুলিশিং মাধ্যমে স্কুলে-স্কুলে গণসচেতনতার লক্ষ্যে পথসভা করা হবে।
‘সতর্কমূলক বার্তা, লিফলেট উপজেলার প্রতিটি স্কুলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে লাগানো ও পোস্টারিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ছাড়া বখাটেদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’