বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন-বিদ্যুৎ বিভাগের দ্বন্দ্বে বিদ্যুৎহীন ১০০ ত্রিপুরা পরিবার

  •    
  • ১০ জুন, ২০২২ ১৩:৪৬

বন বিভাগ বলছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার আইন নেই। তাই বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের নামে মামলা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, নিজেদের কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য বন বিভাগের এই মামলা। মামলার কারণেই তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।

১৬ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই হবিগঞ্জের মধুপুর হিল রিজার্ভ ফরেস্টের কালিগজিয়া এলাকার ১০০ পরিবারের ঘরবাড়িতে। কবে তাদের ঘরে আলো জ্বলবে, সেটিও জানা নেই কারও।

বাহুবল উপজেলার পুটিজুড়ি বন বিটের সংরক্ষিত এলাকার বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ নিয়ে এই ভোগান্তির মূলে বন বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগের দ্বন্দ্ব।

বন বিভাগ বলছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার আইন নেই। তাই বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের নামে মামলা করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, নিজেদের কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য বন বিভাগের এই মামলা। মামলার কারণেই তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।

হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাহুবল আঞ্চলিক কার্যালয় জানায়, পুটিজুড়ি বন বিটের মধুপুর হিল রিজার্ভ ফরেস্টের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কালিগজিয়া। সেখানে দুই টিলায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৩০০ পরিবারের বসবাস।

২০১৮ সালের শেষ দিকে কালিগজিয়ার একটি টিলার ১০০ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় বাহুবল আঞ্চলিক কার্যালয়। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশেই সংযোগ দেয়া হয়। এরপর ২০২০ সালে পুটিজুড়ি বন বিট অফিসও বিদ্যুতের সংযোগ নেয়।

পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় আরও জানায়, ২০২১ সালের প্রথম দিকে ওই এলাকার অন্য টিলাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করলে বন বিভাগ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুটিজুড়ি বন বিটের তৎকালীন কর্মকর্তা জুয়েল রানা পল্লী বিদ্যুতের বাহুবল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শহীদ উল্লাহসহ তিনজনের নামে হবিগঞ্জ বন আদালতে মামলা করেন।

ওই মামলায় বনের প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

দীর্ঘদিন মামলার অগ্রগতি না থাকলেও চলতি বছরের ২৬ মে আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। ওই আদেশের পর ২৫ মে বিদ্যুৎ বিভাগ ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে নানা রকম ভোগান্তি পোহাচ্ছে ১০০ পরিবারের সদস্যরা।

ওই এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী পায়েল দেববর্মা পরীক্ষায় বসছে আগামী ১৯ জুন। সে নিউজবাংলাকে বলে, ‘এই গ্রাম থেকে আমরা ১২ জন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেব। বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা ঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারছি না।

‘কিছুদিন পর পরীক্ষা। যদি দ্রুত বিদ্যুৎ না আসে, তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব।’

কালিগজিয়া আদিবাসী মহিলা সমিতির সভাপতি স্বপ্না দেববর্মা বলেন, ‘বিদ্যুৎ আসার পর হারিকেনসহ এ ধরনের যেসব জিনিসপত্র ছিল, সব ফেলে দেয়া হয়েছে। এখন আমরা মোমবাতি দিয়ে চলি।

‘মোমবাতি দিয়ে কতদিন চলা যায় বলেন? তা ছাড়া রাতে অন্ধকারে বন্য প্রাণীরাও আমাদের বাড়িঘরে হামলা করছে।’

স্থানীয় গৌতম দেববর্মা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের একটি পরিবারও অন্ধকারে থাকবে না। তাহলে আমরা কেন বিদ্যুৎ পাব না? আমরা তো এই এলাকায় শত শত বছর ধরে বসবাস করছি। আমরা কি এ দেশের নাগরিক না?’

সুনীল দেববর্মা জানান, তিন বছর আগে যখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়, তখন বন বিভাগ কোনো বাধা দেয়নি। এখন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকদের সঙ্গে বন বিভাগের কোনো একটা বিষয় নিয়ে ঝামেলা লাগায় তারা মামলা করেছে। তাই লাইন কেটে দেয়া হয়েছে।

ভোগান্তির বিষয়ে কালিগজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সীমা দেববর্মা বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় শিশুরা মন দিয়ে লেখাপড়া করতে পারছে না। তা ছাড়া আমাদের এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা খাবার পানি।

‘এমনিতেই আমরা পাহাড়িরা পানির সমস্যায় ভুগি। তার মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় মোটর দিয়ে পানি তুলতে পারছি না। স্কুলে এলে কোনো শিক্ষার্থী পানি খেতে পারে না।’

বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এই সমস্যার বিষয়ে বাহুবল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শহীদ উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়, তখন বন বিভাগ বাধা দেয়নি। এমনকি তারা নিজেরাও একটি সংযোগ নিয়েছে। পরে দুই নম্বর টিলায় সংযোগ দিতে গেলে তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে। তাই মামলা করেছে। তবে কী সেই স্বার্থ, সেটি জানা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন বিভাগ আমাদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে। সরকারি দপ্তরের কোনো মামলায় নাম দেয়ার কথা না। এতেই বোঝা যায়, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’

বন বিভাগের দাবি, প্রথমবার সংযোগ দেয়ার সময়ই বিদ্যুৎ বিভাগকে বাধা দেয়া হয়। তারা বাধা উপেক্ষা করে সংযোগ দিয়েছে। বারবার বলার পরও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি। তাই মামলা করা হয়েছে।

পুটিজুড়ি বিট কর্মকর্তা রতীন্দ্রকিশোর রায় বলেন, ‘আমার আগের কর্মকর্তা মামলাটি করেছিলেন। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নিয়ম নেই বলেই তিনি মামলাটি করেছেন।

‘বিট অফিসে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। আগের কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নিয়ম নেই, এটা সত্য। যেহেতু দেয়া হয়েছে, সেহেতু তিন বছর পর লাইন বিচ্ছিন্ন করা ঠিক হয়নি।

‘আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। যদিও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংযোগ দেয়া সম্ভব না, তবুও মানবিক বিষয় বিবেচনা করে সংযোগ চালু করার চেষ্টা করব।’

এ বিভাগের আরো খবর