রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা মামলায় সুমন সিকদার ওরফে মুসাকে ১৫ দিনের রিমান্ডে চায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই মামলায় এর আগে গ্রেপ্তার ১২ জনকে পর্যায়ক্রমে রিমান্ডে এনে মুসার মুখোমুখি করবে ডিবি।
শুক্রবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুটার মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তার দেয়া জবানবন্দিতে মূল পরিকল্পনা ও সমন্বয়কারী হিসেবে মুসাকে উল্লেখ করেন তিনি। তার পর থেকেই আমরা মুসাকে খুঁজছিলাম। টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে ঘটনার আগেই মুসা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আমরা তদন্তের একপর্যায়ে জানতে পারি মুসা ওমানে অবস্থান করছেন। তখন বাংলাদেশ ইন্টারপোল ডেস্ক ওমানের ইন্টারপোল ডেস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
‘ওমান পুলিশ মুসাকে আটক করার পর সেখানকার পুলিশ আমাদের এসকর্ট পাঠিয়ে নিয়ে আসার জন্য বলে। ডিবি মতিঝিল বিভাগের দুজন এডিসি ও পুলিশ সদরদপ্তরে ইন্টারপোল ডেস্কের একজন সহকারী কমিশনারকে ওমান পাঠানো হয়। তারা গতকাল মুসাকে নিয়ে দেশে ফেরেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মুসাকে ১৫ দিনের রিমান্ডে চাইব। আগে গ্রেপ্তার আসামিদেরও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আগে গ্রেপ্তার আসামিদের দেয়া তথ্য ও মুসার কাছে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে, মুখোমুখি করা হবে।’
টিপু হত্যায় মুসাকে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে নিহত টিপুর স্ত্রী বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, মুসা প্রধান পরিকল্পনাকরী হতে পারে না। এর পেছনে অন্য কারও হাত রয়েছে।
এ বিষয়ে ডিবি প্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, ‘মুসাকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তখন অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে।’
শুটারকে বহনকারী মোল্লা শামীম দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমরা সব তথ্য যাচাই করছি। তার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
বৃহস্পতিবার মুসাকে ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি সেদিন সকালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন গাড়িতে থাকা টিপু।
এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা ২৪ বছর বয়সী কলেজছাত্রী প্রীতি।
এ ঘটনার পরের দিন টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
মামলার পর ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ২৮ মার্চ তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত।
আলোচিত এই হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুটার মাসুমের জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনায় মুসার নাম আসে।
ডিবি জানায়, মুসার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র মামলাসহ ১১টি মামলা রয়েছে। তিনি ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপ ও মানিক গ্রুপের সদস্য।
ডিবি ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী প্রতিপক্ষ টিপুকে হত্যা করতে রিজভী হাসান হত্যা মামলার আসামিদের ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনার তিন-চার মাস আগে টিপু হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিকাশ-প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম সদস্য মুসার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করেন মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। এর মধ্যে প্রথমে মুসাকে ৯ লাখ টাকা দেন তিনি। মার্চের ১২ তারিখে টাকা নিয়ে দুবাই চলে যান সুমন শিকদার ওরফে মুসা। সেখান থেকে যান ওমানে।