মেহেরপুরে গ্রীষ্মে শীতের সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে বাজারে দাম ভালো পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯২ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। কৃষিনির্ভর মেহেরপুরে তিন বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে বছর জুড়ে চাষ শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজি চাষের।
শুরুতে তেমন একটা সফলতা না পেলেও বতর্মানে সফলতার মুখ দেখছেন চাষিরা। শীতকালীন সবজি গ্রীষ্মকালে চাষের ধারা অব্যাহত রাখতে কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে জেলা কৃষি বিভাগ।
কৃষকরা জানান, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিঘা প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে দ্বিগুণের বেশি মুনাফা পাওয়া সম্ভব।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষে একটু খরচ বেশি হলেও বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় লাভবান হওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে কপি চাষ করতে ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।
‘তবে জমি থেকে জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা এসে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আর স্থানীয়ভাবে খুচরা বেচতে পারলে তা থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পযর্ন্ত পাওয়া সম্ভব।’
গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের ফুলকপি চাষি আজমাইন হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই মাঠে এবার বেশ কিছু জমিতেই শীতকালীন সবজি ফুলকপির চাষ হয়েছে। গত বছর আমি এক বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছিলাম। তবে সেবার বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এবার খুব ভালো হয়েছে। তাছাড়া এবার বাজারে দাম ও বেশ ভালো।
‘এ বছর ছোট-বড় মিলিয়ে প্রতি পিস ফুল কপি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা করে।
গাংনী উপজেলার মটমুড়া গ্রামের সবজি চাষি শাহারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। এর মধ্যে সপ্তাহ খানেক আগে ঢাকার এক পাটি এসে বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকা হিসেবে কিনে নিয়ে গেছে। আমার টাকা দরকার থাকায় দ্রুত সব বিক্রি করে দিয়েছি।’
ফুলকপি চাষি তাহের উদ্দিন বলেন, ‘আমি ১০ কাঠা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। সপ্তাহ খানেক হবে বাজারে এসে পাইকারদের কাছে তা বিক্রি করছি। স্থানীয় বাজারে প্রকারভেদে গড়ে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম।’
বামন্দী বাজারের সবজি বিক্রেতা সজীব উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রায় ১০ দিনের মতো হবে ফুলকপি বিক্রি করছি। শুরুতে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বতর্মানে দাম কিছুটা কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা পযর্ন্ত বিক্রি করছি।’
বামন্দী বাজারের সবজি বিক্রেতা মনোয়ার বলেন, ‘আমরা বাজারে খুচরা সবজি বিক্রি করি। তাই বিভিন্ন জায়গায় দেখে যেখানে কম দামে পাই সেখান থেকে কিনি তারপর বিক্রি করি। বতর্মানে কারো কাছ থেকে ৪৫ টাকা কেজি,আবার কারো কাছ থেকে সবজির মান বিচারে ৫০ টাকা দরেও কিনি। বাজারে এসে গড়ে ৬০ টাকা করে বিক্রি করি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামসুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, ‘মেহেরপুর মাটি প্রাকৃতিকভাবেই খুব উর্বর হওয়ায় এখানে বছর জুড়ে প্রায় সব ধরনের সবজি হয়ে থাকে। জেলার তিনটি উপজেলায় প্রায় ৯২ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাষ হচ্ছে। এ ফসল নব্বই দিনের মধ্যেই উঠে যায়।
‘এ ছাড়া বতর্মান বাজারে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যায়। এতে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।’
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে চাষিদের সর্বদা পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।