বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ যাচ্ছিল মায়ের, বাঁচাতে পারেনি কিশোরী

  •    
  • ১০ জুন, ২০২২ ০৯:৩৫

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইদুজ্জামান বলেন, ‘ওই বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমরা ঘটনা তদন্ত করছি। কারও গাফলতির খবর পেলে ব্যবস্থা নেব।’

তীব্র তাবদাহের পর মুষলধারে বৃষ্টি। টানা আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জ নগর শান্ত হলেও আগুন জ্বালিয়ে গেল প্রীতি রানীর জীবনে।

বৃষ্টির মধ্যেই বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ হারিয়েছেন তার মা ও দুই জেঠি (চাচি)। তাদের বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎতের স্পর্শে ছিটকে পড়েছিল প্রীতিও। চোখের সামনে প্রাণ হারাতে দেখে মা ও জেঠিদের। আত্মার আত্মীয়দের হারিয়ে যেন কথা বলার শক্তিই হারিয়ে ফেলেছে প্রীতি।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ আকাশ মেঘলা হয়ে ওঠে। মুহুর্তের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে শুরু হয় বৃষ্টি। সাড়ে ১২টার দিকে দেওভোগ আখড়া এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান মনি রানী ঘোষ, বাসন্তী রানী ঘোষ ও বিমলা রানী ঘোষ নামে তিন গৃহবধূ। তারা সম্পর্কে একে অপরের জা। তাদের মধ্যে মনি রানীর মেয়ে প্রীতি।

আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা রয়েছে প্রীতির। তাই এখন পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকত মেয়েটি। ঘটনার সময়ও ঘরের ভেতরে পড়ছিল। বাইরে চিৎকারের শব্দ শুনে বের হয়ে দেখে তার মা ও জেঠিরা বাড়ির গেটের সঙ্গে বিদ্যুতায়িত অবস্থায় পড়ে আছেন।

মাকে হারানোর ভয়ে কোনো কিছু না ভেবে দ্রুত তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় সে। মাকে ধরে টানার চেষ্টা করে ছিটকে পড়ে। উঠে দাঁড়িয়ে আবারও যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রতিবেশীরা তাকে আগলে ধরে। প্রীতি রানীর আক্ষেপ, সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও সে তার মাকে বাঁচাতে পারেনি, বাঁচাতে পারেনি জেঠিদেরও।

ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে মরদেহ নেয়া হয় আখড়া মন্দিরের ভেতরে। সেখানে আহাজারি করছিল প্রীতি। ক্ষণে ক্ষণে চিৎকার করে বলছিল, ‘মাকে আমি বাঁচাতে পারলাম না।’

চোখের সামনে তিনটি মরদেহের পাশে থাকা মেয়েটি একপর্যায়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়, তবে তার চোখের জল গড়িয়ে পড়া থামেনি।

প্রীতি রানী ঘোষ নিউজবাংলাকে বলে, ‘বৃষ্টির আগেও সবকিছু ঠিক ছিল। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর জেঠি উঠোন পরিষ্কারের কাজ করতে থাকে। হঠাৎ চিৎকার শুনে মা ও আরেক জেঠি সেখানে যান। এরপর আমি যাই। ততক্ষণে আমাদের সব শেষ।’

মৃত বিমলা রানীর ভাগনি শিল্পী রানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যুতের তার বাড়ির কলাপসিবল গেট দিয়ে টানা ছিল। কোনো কারণে ওই তার থেকে গেট বিদ্যুতায়িত হয়। বৃষ্টির মধ্যে ড্রেন পরিষ্কারের সময় গেটটি ধরে ফেলেন আমার মামি বিমলা রানী। এতে তিনি প্রথমে বিদ্যুস্পৃষ্ট হন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন অন্যরা।’

তার আরেক ভাগনি টয়া রানী বলেন, ‘আমার জেঠিগো কারেন্টে মাইরা লাইছে। হেরা একজন আরেকজনকে বাচাঁইতে গেছিলো। আমাগো কী হইলো এইটা। আমাগো তিনটা পরিবার শেষ হয়ে গেল। বাচ্চাগুলো অহন কেমনে কী করব।’

স্থানীয় কয়েকজন জানান, তারা তিনজন সর্ম্পকে জা হলেও এলাকার মানুষ তাদের বোন ভাবত। তারা একে অপরকে বোনের মতো ভালো ভালোবাসত। এ কারণে একই বাড়িতে সবাই থাকত।

ঘটনার পরপরই সেখানে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। মৃতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাড়ির ড্রেন পরিষ্কার করছিলেন বিমলা রানী। একপর্যায়ে তিনি বাড়ির কলাপসিবল গেটটি ধরলে তাৎক্ষণিক বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েন। গেটের সামনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট অবস্থায় দেখে ঘরের ভেতর থেকে দৌড়ে এসে তাকে বাঁচাতে যান মনি রানী। এ সময় তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।

পরে দুই জাকে বাঁচাতে ছুটে যান বাসন্তী রানী। তাদের স্পর্শ করে তিনি বিদ্যুতায়িত হন। এ সময় তিনজনই গেটের সামনে ঝুঁকে পড়েন। পরে তাদের বাড়ির লোকজনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে তাদের গেট থেকে ছাড়িয়ে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইদুজ্জামান বলেন, ‘পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমরা ঘটনা তদন্ত করছি। তদন্তে কারও গাফলতির খবর পাওয়া গেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর