বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউএনওর অফিসে ছাগলের আনাগোনা

  •    
  • ১০ জুন, ২০২২ ১১:৩০

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা আক্তার বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ বাউন্ডারির মধ্যেই আমার, চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার। আমি ও চেয়ারম্যানসহ অনেকেই ছাগল পালন করি। সামনে কোরবানির ঈদ হওয়ায় ছাগলগুলো পালন করছি। আমার দুটো ছাগল আছে।’

ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদ ভবনের দোতলায় ঘোরাঘুরি করে দুই ছাগল। সেখানেই খাবার খায়। মেঝেতে মল-মূত্র ত্যাগ করে; নষ্ট করে টবের গাছ।

কর্মদিবসগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা আক্তারের কার্যালয়ের সামনে দেখা যায় এমন চিত্র।

উপজেলা পরিষদ ভবনে ছাগল দুটির উৎপাত নিয়মিত সইতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার একাধিক কর্মী। ছাগলের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মীদের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদের বারান্দা ও বাগানের সৌন্দর্য বাড়াতে যে গাছ লাগানো হয়েছে, তা খেয়ে নষ্ট করছে ছাগলগুলো। ভবনের বারান্দাসহ যেখানে-সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করছে এগুলো।

তাদের ভাষ্য, বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তারা ছাগলের উৎপাতে বিরক্ত হলেও প্রাণী দুটি ইউএনওর হওয়ায় খোলেন না মুখ।

কী বলছেন সেবাগ্রহীতারা

সালথা বাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী পরিমল চন্দ্র সাহা বলেন, “উপজেলা অফিসের দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে দেখি সিঁড়িতে ছাগলের পায়খানা ছড়িয়ে আছে। ছাগল প্রস্রাব করায় সিঁড়ি পিচ্ছিল হয়ে গেছে। সিঁড়ির রেলিং ধরে দুর্গন্ধে নাক চেপে উপরে উঠে দেখি, ইউএনওর রুমের সামনে দুটি ছাগল।

“আমি চেঁচিয়ে ছাগল তাড়াতে গেলে ইউএনওর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পিয়ন আমাকে চুপ করতে বলে বলেন, ‘এগুলা স্যারের (ইউএনও) ছাগল। কথা বইলেন না।’ আমি শুধু বললাম, ‘ইউএনও স্যারের সঙ্গে তার ছাগলও অফিস করে!’”

উপজেলা পরিষদে সেবা নিতে আসা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ থাকবে পরিষ্কার-পরিছন্ন, যেখানে মানুষ সেবা নিতে এসে পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু এ কী অবস্থা দেখছি?’

ইউএনও-সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য

কর্মস্থলে ছাগলের বিচরণ নিয়ে জানতে চাইলে সালথার ইউএনও তাছলিমা আক্তার বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ বাউন্ডারির মধ্যেই আমার, চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার। আমি ও চেয়ারম্যানসহ অনেকেই ছাগল পালন করি। সামনে কোরবানির ঈদ হওয়ায় ছাগলগুলো পালন করছি। আমার দুটো ছাগল আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাগলগুলো ছেড়ে পালন করা হয়। এতে অনেক সময়ই পরিষদের বারান্দায় চলে আসে।’

গাছের ক্ষতি ও মেঝে নোংরা করার পরও ছাগল উপজেলা পরিষদে কেন আনা হয় জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘ছাগলগুলো বারান্দায় আসলে তো আর মেরে ফেলতে পারি না। তাদেরকে তাড়িয়ে দিই।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল্লাহ আহসান বলেন, ‘সরকারি অফিস চত্বরে গবাদি পশু পালনের কোনো সুযোগ নেই, তবে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে পালন করে তাতে জনগণকে বিরক্ত বা মালের ক্ষতি করা যাবে না। আইনিভাবে কোথাও নেই সরকারি প্রতিষ্ঠানে গবাদি পশু লালন-পালন করা যাবে।

‘অনেক সময় সরকারি কোয়ার্টারের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গবাদি পশু লালন পালন করে থাকে, তবে সেটা অবশ্যই কোয়ার্টারের মধ্যে বেঁধে পালন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘অফিসের মধ্যে মানুষকে বিরক্ত করার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে কেউ চাইলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। সেনসেটিভ ইস্যু নিয়ে শাস্তিগত ব্যবস্থা কী হতে পারে, তা বলতে পারছি না।’

অফিস চত্বরে ছাগল পালন করে জানমালের ক্ষতি হলে কোনো ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই কর্মকর্তার কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে এ রকম কোনো শাস্তির ব্যবস্থা আছে কি না আমার জানা নাই, তবে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে থাকলে তারা তাদের বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।’

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকার সালথা উপজেলা পরিষদে ছাগল পালনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে সালথার নির্বাহী কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন। এটা তার বিষয়। আপনি তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলেন।’

ছাগল পালনের বৈধতা আছে কি না জানতে চাইলেও একই উত্তর দেন ডিসি।

এ বিভাগের আরো খবর