রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন সুমন সিকদার ওরফে মুসাকে পুলিশের এসকর্ট দল পাঠিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
তবে এবারই প্রথম নয়। এর আগে সৌদি আরবে গিয়ে পুলিশের একটি এসকর্ট দল আসামি নিয়ে আসে।
এবারের আসামি ফেরত আনার কাজ সম্ভব হয়েছে ইন্টারপোলের বাংলাদেশ ডেস্ক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জোর তৎপরতায়।
ওমান থেকে তাদের বহনকারী উড়োজাহাজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে বিমানে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
মুসা বর্তমানে ডিবি কার্যালয়ে রয়েছেন। টিপু হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আগামীকাল আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল ঢাকা ডেস্কের দায়িত্বে থাকা সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয়বারের মতো এসকর্ট পাঠিয়ে আসামি আনতে সক্ষম হয়েছি।’
ওমানে মুসা আটক হওয়ার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সমঝোতায় তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মুসাকে আনতে গত রোববার ওমানে যান ডিবির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান, অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মুসা প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পালিয়ে যান। সেখান থেকে যান ওমানে।
ইন্টারপোলের দেয়া তথ্যে গত ১৭ মে মুসাকে আটক করে ওমান পুলিশ। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডিবি ও এনসিবির তৎপরতায় মুসাকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। বুধবার গভীর রাতে মুসাকে নিয়ে ওমান থেকে রওনা হন বাংলাদেশ পুলিশের তিন কর্মকর্তা।
গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাজাহানপুরের আমতলা এলাকায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন গাড়িতে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু। এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতি।
এ ঘটনার পরের দিন টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
মামলার পর ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে শ্যুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ২৮ মার্চ তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত।
আলোচিত এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শ্যুটার মাসুমের জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনায় মুসার নাম আসে।
ডিবি জানায়, মুসার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র মামলাসহ ১১টি মামলা রয়েছে। তিনি ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপ ও মানিক গ্রুপের সদস্য।
ডিবি ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিপক্ষ টিপুকে হত্যা করতে রিজভী হাসান হত্যা মামলার আসামিদের ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনার তিন-চার মাস আগে টিপু হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিকাশ-প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম সদস্য মুসার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করেন মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। এর মধ্যে প্রথমে মুসাকে ৯ লাখ টাকা দেন তিনি। মার্চের ১২ তারিখে টাকা নিয়ে দুবাই চলে যান সুমন শিকদার ওরফে মুসা। সেখান থেকে যান ওমানে।