’৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে ওঠার স্লোগান দেয়ার পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতির বাসার সামনে গিয়ে ওসমানপুত্রসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে।
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই মহড়া দেয় বলে অভিযোগ করেছেন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদ।
অয়ন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি ওই এলাকায় গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। আর পুলিশ বলছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পটকা ফুটিয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার দুপুর থেকে একটি কাজে আমি ঢাকায় অবস্থান করেছি। রাতে আমার বাড়ির সামনের এক পরিচিত লোক ফোন করে জানায়, এমপি শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানসহ ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ ও তাদের লোকজন আমার বাড়ির সামনে গিয়ে গালমন্দ করছে।
‘এরপর অয়ন ওসমান তিনটি ফাঁকা গুলি করেছে। ৩০০ শয্যা হাসপাতালের সামনে যে সড়কে বসে আড্ডা দিই সেখানে গিয়েও গালিগালাজ করেছে।’
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ছাত্রলীগ কর্মীরা তার ওপর হামলা করতে চেয়েছে বলেও অভিযোগ ছাত্রদল নেতার। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর পরই আমার এলাকার পরিচিত অনেকে ফোন করেছে। তারা বলেছে আমাকে এলাকায় না যেতে।’
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, “সেখানে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান তার ছেলেপেলে নিয়া গিয়া ফাঁকা গুলি করছে। সে নাকি বলছে, ‘রনি কই? শাহেদ কই’।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার পর খাঁনপুর হাসপাতাল এলাকার সড়কে যায় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও একটি গাড়ি। সেখানে ছাত্রলীগের লোকজনের সঙ্গে ছিলেন অয়ন ওসমান। শাহেদকে উদ্দেশ করে তারা গালাগাল করে। এরপর সেখানে থাকা লোকজন গুলির শব্দ শুনতে পান। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালের সামনের সড়কে থাকা দোকানিরা তাদের দোকানপাট বন্ধ করে দেন। এ ঘটনার প্রায় ২ ঘণ্টা পর সেখানে পুলিশ যায়, তবে তারা কাউকে পায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অয়ন ওসমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গতকাল নারায়ণগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছি। সেখানে থেকে চলেও এসেছি। এমন কোনো ঘটনা তো ঘটেনি। এমন গুজব রাস্তাঘাটে শুনতে পাওয়া যায়। আমি কেন গুজবে কান দেব?’
অয়ন ওসমান বলেন, ‘হঠাৎ করে আমাকে এমনভাবে কেন টার্গেট করা হচ্ছে, আমি সেটা বুঝি না। আমি তো রাজনীতি করি না। আমাকে এমনভাবে টার্গেট করা হবে কেন?’
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ছাত্রদল নেতা শাহেদ আহমেদ ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ স্লোগান দিয়ে আমার দলের নেত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের ছেলেপেলেরা সেখানে গিয়েছিলেন। তবে সেখানে তারা ছাত্রদলের কাউকে পাননি।”
অয়নের ভূমিকা কী ছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই দিক দিয়ে আসার সময় অয়ন ছাত্রলীগের ছেলেদের বুঝিয়ে ফেরত নিয়ে আসেন। সেখানে ফাঁকা গুলি বা চকলেট বোমা ফাটানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল রাতে অয়ন ওসমান ও তার বন্ধুরা খাঁনপুরে গিয়েছে শুনেছি। তারা চকলেট বোমা ফুটিয়েছেন জেনেছি। সেখানকার লোকজন শব্দ শুনেছে।
‘আমরা রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখানও কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’