সব রাজনৈতিক দলকে সাহসী হয়ে ভোটে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বলেছেন, ভোটকে তারা অস্বচ্ছ হতে দেবেন না। ভোটের দিন কোনো অস্বচ্ছতার চেষ্টা হলে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলছিলেন সিইসি। বেলা ১১টায় তার সভাপতিত্বে এই সংলাপ শুরু হয়৷
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর কমিশন ধারাবাহিক যে সংলাপ করছে, তার অংশ হিসেবে এই আয়োজন হয়।
দায়িত্ব নেয়ার পর বর্তমান কমিশন এমন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা এর আগে দেখা যায়নি। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছে কমিশন। যদিও পরে হাইকোর্ট সেই আদেশ স্থগিত করায় সেই প্রার্থীর ভোটে লড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী ভোট ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়ার পর সেখানে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একজন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠার পর সেখানেও ভোট স্থগিত করা হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইন লঙ্ঘন করে প্রচার চালানোর অভিযোগ ওঠার পর ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতৃত্ব দেয়া বিএনপি এই কমিশন সম্পর্কে আগের অবস্থানেই আছে। এই কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে না যাওয়ার যে ঘোষণা তারা দিয়েছে, সেটি পরিবর্তন হয়নি এখনও।
সিইসি সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘যদি অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে প্রকৃত অর্থে সেটা নির্বাচন হয় না। ২০০টা বা ২৫০টা সিট যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়ে যায়, তাহলে হয়তো সরকার গঠন হবে, কিন্তু সেটার লেজিটিমেসি (বৈধতা) অনেক কমে যাবে।
‘বিরোধী দলগুলোকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দৃঢ়ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।’
অস্বচ্ছ করার চেষ্টা হলে ভোট বন্ধ
নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করার জন্য যদি ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয়, সে নির্বাচনকেও ব্ল্যাক আউট বা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো কূটকৌশল করতে পারবেন না। যদি নির্বাচনকে আড়াল করার জন্য ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করে, তাহলে আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট করে বক্তব্য থাকবে, সেটা টলারেট করা হবে না।’
সিইসি বলেন, ‘কমিশন বিশ্বাস করে, সরকার এবং দলের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেই বিভাজনকে ভুলে গেলে চলবে না। কমিশনকে সাহায্য করবে সরকার, দল নয়।’
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চান সিইসি। তিনি বলেন, ‘ইভিএম আমাদের জন্য খুবই সুবিধাজনক একটি জিনিস। ... কারণ, ওখানে গিয়ে আমি ১০টি ভোট দিতে পারব না। আরেকজন ৫০টি ব্যালট ছিনতাই করে ভোট দিতে পারবে না। কারণ আগে আইডেন্টিফাইড হতে হবে, পরে বায়োমেট্রিকস মিলতে হবে।’
পর্যবেক্ষকরা যা বললেন
দেশের ৩২ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার প্রধানদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এখানে ২০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন।
সংলাপ শেষে মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ভুইয়া বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘ভোটের মাঠে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ভোট অংশগ্রহণমূলক হয় না। সহিংসতা কমাতে পারলে ভোটে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে পারে।’
কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যত চেষ্টা করুক, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ইচ্ছা প্রকাশ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
সংলাপে অংশ নেয়া আব্দুল আলীম বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনারা প্রার্থিতা বাতিল করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা চালু রাখতে হবে।’
নির্বাচন কমিশন ইমেজ সংকটে রয়েছে বলে মনে করেন লুৎফুর রহমান ভুইয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা রাজিয়া। তিনি বলেন, ‘আগের রাতে ভোট হয়ে যায়৷ তাহলে তো জনগণ আস্থা পাবে না৷’
মুভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল হক নির্বাচনের সময় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইন্টারনেট বন্ধ না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘বিগত কয়েক নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার কারণে নতুন ভোটারদের মধ্যে অনীহা ও ভীতি জন্মেছে। তাই নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহী করতে দেশব্যাপী ভোটার উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নেয়া উচিত।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সম্মানী দেয়ার প্রস্তাব করেন মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবেদ আলী। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষকদের কার্ড দ্রুত দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷ যদি সম্ভব হয় দুদিন আগে দেন।
এ ছাড়া ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা না করার পরামর্শ ছিল অনেকের৷
এক দিনে সব জায়গায় ভোট না করার পরামর্শ দেন ডরপের চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার। ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভোট করার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘পর্যবেক্ষকদের মান বাড়াতে হবে। তাদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।’