পটুুয়াখালীর গলাচিপায় বিয়ে বাড়িতে কনেপক্ষের এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলায় দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া করে আলকতরা মেখে দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
গলাচিপা জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলাটি করেছেন যুবকদের একজন।
আসামি করা হয়েছে চর বিশ্বাস ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবু সায়েম গাজী, হাদি হাওলাদার এবং হযরত হাওলাদারকে।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের পেশকার সাহাবুদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, বিচারক মো. মামুনুর রহমান মামলাটি গ্রহণ করেছে। তিনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আগামী ২ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, বুধবার বিকেলে চর বিশ্বাস ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বিয়ে বাড়িতে যান একই এলাকার তুহিন মিয়া ও কালু গাজী। সেখানে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে তুহিন ও কালুকে কথা বলতে দেখেন বিয়েবাড়ির লোকজন।
এজন্য মেয়েটির বড় ভাই সাইদুল ইসলাম ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে ওই দুই যুবককে ধরে মেম্বার সায়েম গাজীর কাছে নিয়ে যান। সেখানে স্থানীয় বাজারে জনসম্মুখে মেম্বারের নির্দেশে তাদের মাথা ন্যাড়া করেন স্থানীয় হযরত মাঝি ও হাদী হাওলাদার। এরপর মাথায় আলকাতরা লাগিয়ে তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
কালু গাজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই মেয়ে আগে থেকে পরিচিত। তাই বিয়ে বাড়িতে তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কথা বলতে দেখে মেয়ের বড় ভাই আরও লোকজন নিয়ে মেম্বার সায়েম গাজীর কাছে আমাদের নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের মারধর করে চুল কামিয়ে আলকাতরা লাগিয়ে বের করে দেয়।’
‘আমরা এখন লোকলজ্জার ভয়ে পালিয়ে থাকি। আমরা সমাজে কীভাবে বাঁচব? সুষ্ঠু বিচার না হলে নিজেদের জীবন দিয়ে দিব’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কালুর বাবা লিটন গাজী বলেন, ‘আমার ছেলে এমন কী অপরাধ করেছে? যার কারণে মাথা কামিয়ে আলকাতরা দিয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
মেয়েটির ভাই সাইদুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই যুবকরা আমাদের মোবাইলে বিভিন্ন সময়ে বিরক্ত করত। বিয়ে বাড়িতে ছেলেদের পেয়ে আমরা মেম্বার সায়েম গাজীর কাছে নিয়ে যাই। সেখানে সালিশের মাধ্যমে সেলুনের মেশিন দিয়ে তাদের মাথা কামিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তবে আলকাতরা কে বা কারা লাগিয়েছে আমার জানা নেই।’
অভিযুক্ত সায়েম মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরিচয় জানিয়ে এমএমএস করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাসান সরদার বলেন, ‘একজন ইউপি সদস্য কীভাবে জনসম্মুখে দুইজন যুবককের মাথা কামিয়ে দেয়? এটা কোন ধরনের আইন আমার জানা নাই। ঘটনার পরে ওই দুই যুবক লোকলজ্জায় লুকিয়ে ছিল। তার বাবা ও স্থানীয়রা তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।’
চরবিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সী বলেন, ‘জানতে পেরেছি ওই দুই যুবক বরযাত্রী ছিলেন। বিয়ে বাড়িতে কোনো এক মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে তাদের ধরে মাথা কামিয়ে দিয়েছে বলে তাদের (যুবকদের) পরিবার আমাকে জানিয়েছে। তবে যেই এ ঘটনা করে থাকুক, এটা মোটেও ঠিক হয়নি।’
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি, এটি ন্যাক্কারজনক। থানায় মামলা করার জন্য আসার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরে শুনলাম তারা না কি আদালতে মামলা করেছে।’