পুলিশের পরিচয়ে রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা ও জুরাইন নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিজানকে তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। জুরাইন পুলিশ বক্সে হামলার ইন্ধনদাতা হিসেবে সন্দেহভাজন ছিলেন মিজান।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজার সামনে থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী শামিম হাসেম খুকি।
তিনি জানান, তাদের মেয়ে পূর্ণতা হাসিনাকে ফোন করে আটক করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন মিজানুর রহমান।
মিজানুর রহমানের আরেক মেয়ে প্রাপ্যতা হাসিনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বোনকে বাবা কল করে জানিয়েছিলেন, এরপর থানায় গিয়েছি। থানা বলছে, ডিবিতে। ডিবি কার্যালয়ে আসার পর তারা জানায়, এই নামে কাউকে আটকের তথ্য তাদের কাছে নেই।’
তবে শ্যামপুর থানা পুলিশ তাকে আটক করেনি বলে জানিয়েছে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম। তিনি বলেন, ‘পুলিশ বক্সে হামলা মারধরের মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে। আমাদের জানা মতে, ১৮ জনের মতো আটক আছে। মিজানুর রহমান সম্ভবত ডিবি হেফাজতে আছেন।’
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনারকে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
মিজানুর রহমান আলোচনায় আসেন ২০১৯ সালে। রাজধানীতে পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ওয়াসার পানি কতটা ‘সুপেয়’, তা দেখানো ও সেই পানি দিয়ে শরবত তৈরি করে এমডিকে পান করানোর জন্য কয়েকজন একটি কর্মসূচি পালন করেন। যেখানে তারা ওয়াসার এমডির সঙ্গে দেখা করে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে তৈরি শরবত খাওয়াতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি দীর্ঘদিন ওয়াসার দায়িত্বে থাকা এমডি তাকসিম এ খান।
মিজানুর রহমানের মুক্তি দাবি করেছেন তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
নিজের ফেসবুকে দেয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘…দিনরাতে ওর সাধনা ওর পরিশ্রম সর্বজনের ভালো থাকা, সম্মানে থাকা, প্রাণ প্রকৃতি মানুষের সুস্থ থাকা। এই দেশে এ রকম অসংখ্য মিজান আমাদের দরকার।’
তিনি লেখেন, ‘আর পুলিশ এই মিজানকেই থানায় ধরে নিয়ে গেছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা শ্যামপুর থানা বললেও থানা স্বীকার করেনি এখনও। হয়রানি, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, গুম, খুনের এই কালে কোনো মানুষের নিরাপত্তা নাই। নিরাপত্তার জন্য সংঘবদ্ধ ও সোচ্চার হওয়ারও বিকল্প নাই।’
‘সর্বজনের মানুষ’ মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে সুস্থভাবে ঘরে পৌঁছে দিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান আনু মুহাম্মদ।
গত মঙ্গলবার এক নারীকে লাঞ্ছনার অভিযোগে জুরাইন পুলিশ বক্সে হামলা করে স্থানীয় লোকজন। হামলায় পুলিশ বক্স ভাঙচুরসহ মারধরে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
সে ঘটনায় তাৎক্ষণিক ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পাঁচজনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।