আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে রংপুরের তিস্তা নদীতে। এক সপ্তাহ ধরে পানি কমলেও বুধবার রাত থেকে বিদৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। পানি আরও বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এ কারণে বন্যার আশঙ্কায় তিস্তা পাড়ের ফসল আগাম ঘরে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ২ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে রেকর্ড করা হয়েছে। আর দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার উঠলেই এটিকে বিপৎসীমার ওপরে ধরা হবে।
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৩৬ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং কোনো কোনো স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ভাঙন ঠেকাতে আমরা তিস্তা পাড়ে জিও ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছি।’
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে পানি উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের বাদামের আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। শহর রক্ষা বাঁধের কাছে জিও ব্যাগ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
এ সময় গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, ‘ভুট্টা চাষ করেছিলাম, সেগুলো তুলছি। কিন্তু বাদাম মনে হয় ঘরে তুলতে পারব না। বাদাম শক্ত না হতেই পানি আসা শুরু হয়েছে। আমাদের চেয়ারম্যানও পানি বাড়ার কথা জানিয়েছেন। বন্যা হতে পারে, তাই ফসল তাড়াতাড়ি কেটে নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।’
স্থানীয় আব্দুর রহিম বলেন, ‘চার দোন (শতক) জমিতে বাদাম আবাদ করছি। গতকাল রাইতোত জমিতে একটু পানি উঠছে, সব জমিত ওঠে নাই। অমনি বাদাম তোলা লাগবে। বন্যা হইলে সব যাইবে। সব লস হইবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ মাসে তো বান (বন্যা) হয় না। এবার মনে হয় হবে।’
লক্ষিটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যা হওয়ার আশঙ্কায় চরের মানুষকে সতর্ক করে ফসল ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছি। একই সঙ্গে তিস্তার তীরে আছেন এমন শতাধিক পরিবারকে ঘর থেকে অন্যত্র যেতে বলা হয়েছে।
‘সরকারিভাবে একটি নৌকা পাওয়া গেছে, একটি স্পিড বোর্ড দেয়ার কথা রয়েছে। স্পিডবোর্ড পেলে বন্যায় পানিবন্দি মানুষ উদ্ধার করা যাবে।’
উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানান, পানি বাড়লে চিন্তা বাড়ে। কারণ অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়, ভাঙনের মুখে তারা সব হারায়। তিস্তার বাঁধ ভাঙন রোধে কিছু জিও ব্যাগ পাওয়া গেছে। আরও চাওয়া হয়েছে।
রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যা হলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। শুকনা খাবার, চাল ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও আছে।’