বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক এমপি চিনুর প্রভাব খাটানোর তথ্য

  •    
  • ৮ জুন, ২০২২ ২৩:০৪

রাঙ্গামাটির ডিসি বাংলো পার্ক আরেকজনের নামে বরাদ্দ নিয়ে প্রকারান্তরে এটির দখলদার হয়ে বসেন নাজনীন আনোয়ার নিপুণ। রাঙ্গামাটির সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে হওয়ার প্রভাব খাটিয়ে পার্কটি ব্যবহারের শর্তও ভঙ্গ করেন তিনি। পুলিশের বিশেষ শাখা ও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে এর প্রমাণ মেলে।

রাঙ্গামাটির ডিসি বাংলো পার্ক অবৈধভাবে দখল করে রাখার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। দুই বছরের জন্য অন্য একজনের নামে পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত সময়ের পরও তা দখলে রেখেছিলেন নাজনীন আনোয়ার নিপুণ। তিনি রাঙ্গামাটির সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে।

২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে মোহাম্মদ হোসেন নামে একজনকে বার্ষিক ৩৬ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। ১৩টি শর্তে দুই বছরের জন্য এই অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন।

আরেকজনের নামে বরাদ্দ নিয়ে প্রকারান্তরে পার্কটির দখলদার হয়ে বসেন নাজনীন আনোয়ার নিপুণ। নাজনীন ও তার সঙ্গীরা পার্কটি ব্যবহারে প্রায় সব শর্ত ভঙ্গ করেন। পুলিশের বিশেষ শাখা ও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে এর প্রমাণ মেলে।

প্রতিবেদন দুটির কপি নিউজবাংলার হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ৯ আগস্ট রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন একই জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বোরহান উদ্দিন মিঠু।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সরকারি সম্পত্তি রক্ষা, মাদকমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা এবং পার্কটি সাধারণ জনগণের ব্যবহার উপযোগী করে উন্মুক্ত রাখার নিমিত্ত অবৈধ পাইরেটস দোকানটি অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’

এর প্রায় এক মাস পর ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ডিআইজি (রাজনৈতিক) বরাবর একটি প্রতিবেদন জমা দেন রাঙ্গামাটি জেলার বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবীর।

তাতে বলা হয়, ‘সার্বিক বিবেচনায় বলা চলে যে, পার্কটি আবাসিক এলাকায় ও জেলা প্রশাসকের বাংলোর সৌন্দর্য্যের অংশ হওয়ায় রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার কোনোভাবে সমীচীন হবে না।’

জেলা প্রশাসন ও এসবির পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার প্রায় তিন মাস পর ৩ ডিসেম্বর ডিসি বাংলো পার্কে অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টালে।

ফজলে এলাহী সম্পাদিত পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডটকম নামের ওই পোর্টালে ‘রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পাইরেটস বিড়ম্বনা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে এই ডিসি বাংলো পার্কের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়।

ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর কন্যা নাজনীন আনোয়ার নিপুণ নিয়ম লঙ্ঘন করে ডিসি বাংলোর পার্ক এলাকায় ‘পাইরেটস’ নামে একটি রেস্তোরাঁ গড়ে তোলেন। জেলা প্রশাসন পরে উচ্ছেদের নোটিশ দিলে খোদ জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধেই মামলা করেন নিপুণ।

নিপুণের অনিয়মের পেছনে তার মা ফিরোজা বেগম চিনুর প্রভাব রয়েছে বলেও দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাঙ্গামাটির কোতোয়ালি থানায় ১২ ডিসেম্বর সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন চিনুর কন্যা নিপুণ। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর চিনু আরেকটি অভিযোগ করেন।

পুলিশ অভিযোগ তদন্তের অনুমতি চাইলে ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুমতি দেয় আদালত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এই মামলায় সর্বশেষ চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফজলে এলাহীকে গ্রেপ্তার করে রাঙ্গামাটি থানা পুলিশ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন রাঙ্গামাটির সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনু।

ফজলে এলাহী গ্রেপ্তার হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে ফিরোজা বেগম চিনু নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন- মেয়ের নয়, তার করা মামলাতেই সাংবাদিক এলাহীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ডিসি বাংলো পার্কে আমার মেয়ে লিজ নিয়ে রেস্টুরেন্ট দেয়। তিন বছরের জন্য লিজ ছিল, বিনিয়োগ করেছিল প্রায় ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিসি পরিবর্তন হলে রেস্টুরেন্ট নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। ডিসি অফিসের লোকজনের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের বিবাদ হয়।

‘সে সময় এলাহী নিউজ করে যে এই লিজ পেতে আমি আমার প্রভাব খাটিয়েছি। সে আপত্তিকর কথাবার্তা লিখেছে। আমি তখন কোর্টে মামলা করেছি।’

গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় মেয়ের নাম থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের নাম কেন দিয়েছে জানি না, বাদী আমি-ই।’

গ্রেপ্তারের পরদিন বুধবার সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে জামিন দিয়েছে আদালত। জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক ফাতেমা বেগম মুক্তা তাকে জামিনের আদেশ দেন।

বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক ফজলে এলাহী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের করা প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক। জেলা প্রশাসন, এসবির রিপোর্ট এবং ভুক্তভোগীদের বক্তব্যের সমন্বয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়। প্রতিবেদনে কোনো অসত্য তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।’

যা আছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে

২০২০ সালের ৯ আগস্ট রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. বোরহান উদ্দিন মিঠু জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

‘ডিসি বাংলো পার্ক গেটের তালা ভেঙে অবৈধভাবে প্রবেশ সম্পর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে-

‘অদ্য ০৭/০৮/২০২০ তারিখ বনরূপা এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালীন ফোনের মাধ্যমে অবগত হই যে, ডিসি বাংলো পার্কের পেছনের গেটের দুটি তালা ভেঙে কে বা কারা জোরপূর্বক প্রবেশ করে। মোবাইল কোর্ট টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পাই, পার্কের পেছনের গেটের দুটি তালা ভাঙা। অর্থাৎ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এ সময় এসআই সাগর বড়ুয়া ও কনস্টেবল জাকারিয়া উপস্থিত ছিলেন।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘পার্কে অবৈধভাবে অবস্থানকারী ও স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য নেয়া হয়। পার্কে পাইরেটস দোকানে অবৈধভাবে অবস্থানকারী মো. ইরফান হুসেন বলেন- গত ০৬/০৭/২০২০ তারিখ বিকেল আনুমানিক ৫টা ২০ ঘটিকায় সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নিপুণ ম্যাডাম আমাকে পার্কের পেছনের গেটের দুটি তালা ভেঙে ফেলতে বলেন। আমি আর জয় (পাইরেটস দোকানে অবৈধভাবে অবস্থানকারী আরেকজন) তালা ভেঙে ফেলি। পরে নিপুণ ম্যাডাম প্রবেশ করেন।

‘ডিসি বাংলো পার্ক সংলগ্ন মসজিদের ইমাম মো. রুকনোজ্জামান জানান, পাইরেটস দোকানে প্রতিরাতে বিভিন্ন লোকজনের সমাগম হয়, তারা গভীর রাতে গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করে এবং দোকানে হৈ-হুল্লোড় করতে থাকে। এলাকার কিছু বখাটে ছেলে গভীর রাতে দোকানে আড্ডা জমায় এবং মদ, গাঁজা সেবন করে। গেটে তালা থাকায় বিভিন্ন সময় তা ভাঙার হুমকি দেয়া হয়। এভাবে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে। স্থানীয় লোকজনও একই কথা বলেছেন।

‘প্রসঙ্গত, ডিসি বাংলো পার্কটি রাঙ্গামাটিবাসী ও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। সাবেক জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন দর্শনার্থীদের জন্য একটি বিশ্রামাগার ও শৌচাগার নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে পার্কের কিছু স্থাপনা পরিবর্তনসহ অবৈধভাবে পাইরেটস দোকান নির্মাণ করা হয়। এমনকি সাবেক জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে নির্মিত বিশ্রামাগার উদ্বোধন ফলকটিও ভেঙে ফেলা হয়। সরকারি সম্পত্তি রক্ষা, মাদকমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা এবং পার্কটি সাধারণের ব্যবহার উপযোগী করে উন্মুক্ত রাখার জন্য অবৈধ পাইরেটস দোকানটি অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া পারে।’

যা আছে এসবির প্রতিবেদনে

২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি এসবির পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবীর ডিসি বাংলো পার্ক নিয়ে এসবির ডিআইজি (রাজনৈতিক) বরাবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

এসবির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়-

‘অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৮/১২/২০১৭ তারিখে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সাহিদা আক্তার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ১৩টি শর্তে রাঙ্গামাটির কোতোয়ালি থানার দেবাশীষ নগরের মো. হোসেনকে বার্ষিক ৩৬ হাজার টাকা ভাড়ায় দুই বছরের জন্য পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়।

পার্কটি মো. হোসেনের নামে অনুমোদন নিয়ে পক্ষান্তরে নাজনীন আনোয়ার বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছেন। করোনা মহামারির কারষে ডিসি বাংলো পার্কটি বর্তমানে বন্ধ আছে।

পার্কটি বন্ধ হওয়ার আগে এখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কয়েকটি ঘটনা ঘটে। যেমন-

১. গভীর রাত পর্যন্ত পার্কটি খোলা রাখা হতো। সে কারণে সেখানে মাদক বিক্রি ও সেবনের মতো ঘটনা ঘটে এবং ওঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা সেখানে রাত অবধি ভিড় করত। ১৪/০৮/২০১৯ তারিখ রাতে ১০/১২ জন উচ্ছৃঙ্খল বখাটে যুবক সেখানে আইন-শৃঙ্খলাবহির্ভূত ঘটনা ঘটায়।

২. গভীর রাত পর্যন্ত যুবক ছেলেরা মোটর সাইকেলসহ এখানে অবস্থান করত এবং লেকসংলগ্ন কুঁড়েঘরে মাদক সেবন করে মাতলামি ও হুল্লোড় করতো।

৩. গোপন সূত্রে জানা যায় যে, পার্কের পাইরেটস রেস্টুরেন্টের ভেতরে নারীসহ অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘটিত হতো।

৪. অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বরাদ্দের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও জেলা প্রশাসক পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি বিভিন্ন কারণে বাতিল করতে পারছেন না। যেমন- রাজনৈতিক প্রভাব, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে মামলা।

৫. পার্কটি জেলা প্রশাসক ও পর্যটকদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু সেটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নষ্টসহ জেলা প্রশাসকের বাংলোর ঐতিহ্য ও সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়।

৬. উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা গভীর রাত পর্যন্ত পার্কে উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করায় আশপাশের বাসিন্দাদের শান্তির ব্যাঘাত ঘটতো।

৭. পার্ক ব্যবহারের মেয়াদ পার হওয়ার পরও ব্যবহারকারীরা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে অন্যায় ও বেআইনিভাবে পার্কটি দখলে রাখায় উল্লিখিত কার্যকলাপের কারণে প্রশাসনের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। জেলা পুলিশও বিভিন্ন প্রশ্ন ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।

৮. সার্বিক বিবেচনায় বলা চলে যে, পার্কটি আবাসিক এলাকায় ও জেলা প্রশাসকের বাংলোর সৌন্দর্য্যের অংশ হওয়ায় রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার কোনোভাবে সমীচীন হবে না। পার্ক এখন কার দখলে?

ডিসি বাংলো পার্কটি বর্তমানে জেলা প্রশাসনের দখলে রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পার্কটি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান। তবে পার্কটি এখন জেলা প্রশাসনের দখলে রয়েছে এবং পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত আছে।

তবে নাজনীন আনোয়ার নিপুণ বলেন, ‘পার্কটির লিজ নবায়নের জন্য নির্ধারিত সময় পার হওয়ার একদিন আগেই আবেদন করেছিলাম। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর করা ওই আবেদন জেলা প্রশাসক গ্রহণ করেননি। আবার বাতিল করেও দেননি। সেই জায়গা থেকে পার্কটি এখনো আমাদের রয়েছে।’ নিপুণ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চারজন পার্টনার মিলে এই পার্ক ভাড়ার বিনিময়ে লিজ নেয়ার আবেদন করি। এই চারজনের দুজন চট্টগ্রামের বাসিন্দা এবং আমি ও মোহাম্মদ হোসেন রাঙ্গামাটির। আমিও যেহেতু চট্টগ্রামে থাকি, তাই লিজ নেয়ার সময় আবেদন করা হয়েছিল মোহাম্মদ হোসেনের নামে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আমাদের দুই বছরের জন্য লিজ দিয়েছিলেন।

‘আমরা কী কী কাজ করবো এর একটা প্রস্তাবনাও দিয়েছিলাম। সেই প্রস্তাবনা অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করি। পার্কের সৌন্দর্য্য আরও বাড়তো, আমাদের সে পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য কাজ শুরুর কিছুদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক বদলি হয়ে যান। দায়িত্বে আসেন এ কে এম মামুনুর রশীদ। তিনি কোনোভাবেই আমাদের কাজ করতে দিচ্ছিলেন না। পদে পদে বাধা দিয়েছেন।

‘এদিকে কোভিড চলে আসে। আমরা পার্কের সৌন্দর্য্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেই। জাহাজ আকৃতির একটি রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করি, যা আমাদের প্রস্তাবনায় ছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ কোনো কাজই করতে দিচ্ছিলেন না। আমাদেরকে ব্যবসা করতেও দিচ্ছিলেন না। কোভিডের পর আমরা খুলতে গেলে বাধা দেয়া হয়। মিথ্যা-বানায়োট মামলা দেয়া হয়।’

নিপুণ আরও বলেন, ‘আমরা এসব বিষয় নিয়ে রাঙামাটিতে সংবাদ সম্মেলন করি। সেই সংবাদ সম্মেলনের কয়েকদিন পরই ফজলে এলাহী ও আরেকজন সাংবাদিক মিলে আমাদের বিরুদ্ধে নিউজ করেন। নিউজে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানহানিকর শব্দ ও তথ্য ব্যবহার করেন। আমরা তার পরিপ্রেক্ষিতেই আইন ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর