বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সীতাকুণ্ডে আগুন: দগ্ধদের চোখে ‘অজানা উপসর্গ’

  •    
  • ৮ জুন, ২০২২ ২২:২৬

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইয়ুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দগ্ধ ২০ জনের মধ্যে তিনজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। তাদের ১৯ জনের চোখে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট অফ প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি ২০ অগ্নিদগ্ধ রোগীর ১৯ জনের চোখে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা।

এর আগে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চোখে এমন উপসর্গ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইয়ুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দগ্ধ ২০ জনের মধ্যে তিনজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। তাদের ১৯ জনের চোখে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।’

এ ধরনের অভিজ্ঞতা তাদের জন্য নতুন জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘এই সমস্যা একবারেই নতুন। আগুনে দগ্ধ অন্যদের ক্ষেত্রে এমন উপসর্গ চোখে পড়েনি।’

চিকিৎসাধীন ১৯ জনের চোখের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চক্ষু বিভাগের তিন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের নেতৃত্বেই শুরু হয়েছে চিকিৎসা।

আগুনে পোড়া রোগীর ক্ষেত্রে চোখে জটিলতা তৈরির কারণ জানতে চাইলে এস এম আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘মানুষের চোখের পাতা স্বাভাবিকভাবে কিছু পড়ার আগে বন্ধ হয়ে যায়। তবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটনায় দগ্ধদের চোখের পাতা বন্ধ হওয়ার আগেই অনেক গরম বাতাস ও ক্ষুদ্র কণা প্রচণ্ড গতিতে আঘাত হেনেছে। যে কারণে কারও কর্নিয়ায়, কারও চোখের পাতায় ক্ষত দেখা দিয়েছে।’

কিছু ‘অজানা উপসর্গ’ দেখা দিয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক। বলেন, ‘ইতোমধ্যে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ তাদের চিকিৎসা দেয়া হবে। সপ্তাহ পর তাদের চোখের বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’

তবে চোখে প্রদাহ তৈরি হলেও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন না চিকিৎসকরা।

এস এম আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘চিকিৎসকরা আশাবাদী, দগ্ধদের চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা অনেক কম।’

তবে চোখে ক্ষত দেখা দেয়া বা কর্নিয়া আক্রান্ত হলেও রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দায়ী করছেন না এই চিকিৎসক।

এদিকে চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের আগুনে দগ্ধ আরও ছয় রোগী চোখের সমস্যা নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সবাই অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ ইসলামের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তাদের মধ্যে দুজনের দেহ বেশি পুড়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল সেখানে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেয়।

বুধবার সকালের দিকে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে আইউব হোসেন, হেদায়েত হোসেনসহ তিন সদস্যের একটি দল সেখানে যায়।

সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘দগ্ধদের চোখের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিক্যাল চক্ষু বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে আলাদা একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমে ঢাকা মেডিক্যালের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিলীপ কুমার দেবনাথ ও মুক্তি রানী মিত্রকে রাখা হয়েছে। তাদের অধীনেই এই রোগীদের চিকিৎসা চলছে।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুড়ে যাওয়া বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে বুধবার কিছু দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সেগুলো দুই ব্যক্তির বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ডিপোর একটি অংশের কাছাকাছি দুই জায়গা থেকে কিছু দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না মরদেহের পরিচয়। ফায়ার সার্ভিস তা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে আমি বুঝে নিয়েছি। চিকিৎসকরা দেখে জানিয়েছেন দেহাবশেষগুলো দুজন ব্যক্তির।’

তিনি জানান, এ নিয়ে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৬। বুধবার পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

যা ঘটেছিল

নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানাধীন (জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি) প্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপো সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায়। সেখানে গত শনিবার রাত ৯টার দিকে আগুন লাগে।

একে একে ছুটে যায় চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকেও পরে যোগ দেয় কয়েকটি ইউনিট। রোববার সকাল পর্যন্ত আগুন নেভাতে আসা ইউনিটের সংখ্যা বেড়ে হয় ২৫টি।

কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় বিস্ফোরণে বাড়ে আগুনের ভয়াবহতা।

নিহতদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

যে কারণে আগুন

আগুনের ভয়াবহতা আর বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ডিপোর কনটেইনারে থাকা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে দায়ী করেছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস। এই রাসায়নিক অ্যাভিয়েশন শিল্প খাতে ব্যবহার করা হয়। উচ্চচাপে এই রাসায়নিক বোতলজাত করা হয়ে থাকে। রপ্তানির জন্য কনটেইনারে করে এই রাসায়নিক বিএম ডিপোতে রাখা ছিল।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ডিপোর কর্মকর্তাদের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি, কনটেইনারগুলোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল। তবে প্রথমে আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কেউ অবহিত করেনি। এমন রাসায়নিকের আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে।’

আগুনের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপমহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাকিব মুবারাত তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা দিতে এবং নিহত ও আহত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ১৩ সদস্যের আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

এ দুর্ঘটনায় সার্বিক শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক এস এম এনামুল হক তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছেন।

সোমবার বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারাও দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর