পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী এলাকার ইভেন্টের ব্যবস্থাপনা ঐতিহাসিক হবে বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক মতবিনিময় সভায় দলটি এমন তথ্য জানায়।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দুই তীরের জেলাগুলোর সংসদ সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা পড়ে শোনান দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন গাড়ি ওভারটেক করা কিংবা এ ধরনের কোনো প্রতিযোগিতায় যাতে কেউ না নামেন। এ ধরনের কোনো কিছু যাতে না করে, কোনো রকম দুর্ঘটনা যেন না ঘটে।’
মির্জা আজম জানান, দুর্ঘটনা সবকিছু মাটি করে দিতে পারে বলে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘দলীয় প্রধান বলেছেন, ভলেন্টিয়ার্স সক্রিয় থাকবে, আশপাশের সব জেলার ভলেন্টিয়ার্স ঠিক করতে বলেছেন তিনি। ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ সবার পক্ষ থেকে ভলেন্টিয়ার থাকবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবু হাসনাত আবদুল্লাহ, জাতীয় সংসদের চিপ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, শাহজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন, ইকবাল হোসেন অপু, এনামুল হক শামীম, নাহিম রাজ্জাক প্রমুখ।
সভা পরিচালনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর নির্দেশ অনুষ্ঠানের ওপারের দায়িত্ব আমরা লিটন চৌধুরীকে (জাতীয় সংসদের চিপ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন) দিয়েছি। তার সঙ্গে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতারা আছেন। তারা একটা টিমওয়ার্ক সেখানে করছেন।’
তিনি বলেন, ‘নতুনভাবে সজ্জিত সেদিন মঞ্চটা হবে...। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী এলাকার যে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, এটা হবে ঐতিহাসিক।’
পদ্মা সেতুর সাজসজ্জা প্রত্যেকের এলাকায় নিজেদের করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা নিজেদের এলাকায় নিজেরাই করবেন।’
নাম পদ্মা সেতুই থাকবে
সেতুর নাম নিয়ে আর কোনো দ্বিমত বা নতুন নাম হবে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নাম দিতে হবে না। উনি (শেখ হাসিনা) রাজি নন। বারবার চেষ্টা করেছি, সামারি পাঠিয়েছি, নাকচ করে দিয়েছেন। পদ্মা নদীর নামে পদ্মা সেতু, শেখ রেহানারও একই কথা। যে সেতুর জন্য এত অপমান, সেই সেতুতে আর কারও নাম থাকবে না। পদ্মা নদীর নামেই পদ্মা সেতু নাম থাকবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আজও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আজ কত গুজব অপপ্রচার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে না, এ টাকায় ব্যয় সংকোচন করে হেলিকপ্টার কেনা হবে, এমন গুজবও আছে।’
এ সময় তিনি বিএনপি আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের আবারও তীব্র কটাক্ষ করেন। সেটাকে তিনি রূপকথার গল্প বলে জানান।
২৫ তারিখ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে বিএনপিকে সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
পদ্মা সেতু অপমানের প্রতিশোধ
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করে সেতু নিয়ে যত অপমান করা হয়েছে তার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সততা ও সাহসের প্রতীক হলো পদ্মা সেতু। বাঙালি জাতির অহংকার ও গৌরবের প্রতীক। আর একটা দিক হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক আমাদের দুর্নীতি ও চুরির অপবাদ দিয়ে পদ্মা সেতু থেকে সরে গিয়েছিল। সেই বিশ্বব্যাংক যে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে অপমান করেছে, অপবাদ দিয়েছে, বাঙালি জাতির বীরত্ব ও সম্মানকে ক্ষুণ্ন করেছিল, আমাদের ভাবমূর্তির ওপর আঘাত এসেছে। তাই আমি বলব, পদ্মা সেতু শুধু আমাদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার সেতু নয়, এই সেতু আমাদের অপবাদের প্রতিশোধ। আমাদের অপমানের প্রতিশোধ।’
ছয় দিন পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত উদ্বোধনী জনসভা মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে বলে জানিয়েছেন চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে জমকালো ও দেখার মতো একটি অনুষ্ঠান হবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।’
তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসার আগে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসার পর বক্তব্য শুরু হবে। এরপর ওই মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে এবং আলোকসজ্জা হবে।’
আওয়ামী লীগের আয়োজনে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে যে জনসভা তাতে ১০ থেকে ২০ লাখ মানুষ অংশ নেবেন বলে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন তিনি। যারা হেঁটে অংশ নেবেন তাদের যাতায়াত সুবিধায় বিশেষ ব্যবস্থা করার কথাও জানান নূরে আলম।