মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির দুই নেতার অবমাননাকর মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় দুই নেতাকে বহিষ্কার করায় বিজেপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দলটি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিজেপির দুই নেতা মহানবীকে নিয়ে যে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন তা বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে।’
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিজেপি নেতা নূপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদমুখর এখন সারা বিশ্বের মুসলিমরা। ভারতীয় এক টেলিভিশন বিতর্কে মহানবীকে নিয়ে নূপুরের মন্তব্য এবং সেটিকে সমর্থন করে তার সহকর্মীর টুইট করার বিষয়টি অন্যদের মতো বিএনপির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অন্যের বিশ্বাস ও ধর্মকে আঘাত করে নূপুরের আক্রমণাত্মক মন্তব্য সংকীর্ণতা ও চরম ধৃষ্টতার শামিল।’
তাদের মন্তব্যে জনসমাজে বিভাজন রেখা সুস্পষ্ট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফখরুল। তিনি বলেছেন, ‘এই মন্তব্য সম্পূর্ণরূপে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করা, যা সর্বজনীন মৌলিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থি। বিএনপি এই অমর্যাদাপূর্ণ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’
তবে এ ঘটনায় দলের দুই নেতাকে বহিষ্কার করায় বিজেপিকে ধন্যবাদও জানিয়েছে বিএনপি। ফখরুল বলেন, ‘দলের মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সাময়িক বরখাস্ত ও অপর নেতা নবীন কুমার জিন্দালকে বহিষ্কার করায় বিজেপিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি।’
উভয় দেশের জনগণের মধ্যে সুপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বরাবরের মতোই অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই বিএনপি নেতা।
ঘটনার শুরুজ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে নূপুর মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
ইসলাম সম্পর্কেও তার কিছু মন্তব্যের জেরে দেশটিতে মুসলিম সমাজে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। নূপুরের বক্তব্যের প্রতিবাদে গত শুক্রবার কানপুরে বনধ পালনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন রাজ্যে এরই মধ্যে নূপুরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শুধু নূপুরই নন, মহানবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন নবীন কুমার জিন্দালও।
এ ইস্যুতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় বিজেপির পক্ষ থেকে রোববার নূপুর ও নবীনকে ছয় বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে ক্ষোভ
মহানবীকে নিয়ে বিজেপির দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে দলটি। অন্তত ১৫টি দেশ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।
ভারতের শ্রমবাজারের বড় একটা অংশ থাকে যেসব দেশে, সৌদি আরব, ওমান, বাহরাইন, জর্ডান, লিবিয়া সেসব দেশে হয়েছে প্রতিবাদ।
বাদ যায়নি আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা কাতার, কুয়েত এবং ইরানও। এসব দেশেরও ক্ষোভ সামলাতে হচ্ছে ভারতকে।
এসব দেশে ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এবং পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, সেসব দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণাও দিচ্ছেন মুসলমানরা।
মহানবীর বিরুদ্ধে বিজেপি মুখপাত্রের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে রোববার ভারতীয় দূতদের তলবও করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ।
নেতাদের টিভি বিতর্কে অংশ নিতে বিজেপির নিয়মএ ঘটনার পর দলের নেতা ও মুখপাত্রদের টিভি বিতর্কে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নতুন নিয়ম করেছে বিজেপি। এখন থেকে কেবল দলটির অনুমোদিত মুখপাত্র এবং প্যানেলিস্টরা টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন। টিভি বিতর্কে অংশ নিতে মুখপাত্র এবং প্যানেলিস্ট নির্ধারণ করে দেবে দলটির মিডিয়া সেল।
এ ছাড়া কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনা যাতে না করে সে ব্যাপারেও দলের মুখপাত্রদের সতর্ক করা হয়েছে।
উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলাকালে সীমা লংঘন না করতে প্যানেলিস্টদের বলা হয়েছে। তাদের ভাষাকে সংযত রাখতে এবং রাগান্বিত না হতে আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
কোনো উসকানিতেই তারা দলের মতাদর্শ বা আদর্শ লংঘন করতে পারে না বলে জানানো হয়েছে।
কোনো টিভি আলোচনায় যাওয়ার আগে আলোচনার বিষয়বস্তু দেখে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে এবং দলীয় নীতিতে ওই ব্যাপারে কী বলা আছে তা দেখে যেতে মুখপাত্রদের নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।