‘ঘরের মাইনসেই ইবার নাও ডুবাইবো। বাইরের মানুষ লাগতো নায়’- বললেন বিয়ানীবাজার পৌরসভার শ্রীধরা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদির।
আগামী ১৫ জুন সিলেটের এই পৌরসভায় নির্বাচন। পৌরসভার নির্বাচনের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে রোববার এমন মন্তব্য করেন কাদির।
বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ প্রার্থী। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মেয়র আব্দুস শুকুর। তবে দলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আরও তিন নেতা।
বিদ্রোহীরা হলেন বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুকুল হক (চামচ) ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহবাব হোসেন সাজু (কম্পিউটার)। তিনজনকেই দল থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। তবু তাদের ভোট থেকে সরানো যায়নি।
আর এই তিন বিদ্রোহীর কারণে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির প্রার্থী আব্দুস শুকুর বর্তমান মেয়র, তার দল ক্ষমতায়, নির্বাচনে বিএনপিও নেই। তবু স্বস্তিতে নেই শুকুর। দলের বিদ্রোহীরাই অস্বস্তিতে ফেলেছেন তাকে।
এই চারজন ছাড়াও বিয়ানীবাজারে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সুনাম উদ্দিন (লাঙল), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল কাশেম (কাস্তে), স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রভাষক আব্দুস সামাদ আজাদ (হ্যাঙ্গার), মোহাম্মদ অজি উদ্দিন (নারকেলগাছ), মোহাম্মদ আব্দুস সবুর (মোবাইল ফোন) এবং তফজ্জুল হোসেন (জগ)।
দলের মতো আব্দুস শুকুরের এলাকায়ও দেখা দিয়েছে বিদ্রোহ। শুকুরের নিজ গ্রাম কসবা থেকেই মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন।
তবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী মনে করেন, বিদ্রোহীরা আওয়ামী লীগের জন্য কোনো ফ্যাক্টর হবে না। তিনি বলেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের তেমন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন না। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফলে ভোটে তারা কোনো প্রভাব ফেলতে পারবেন না।
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য জনগণ নৌকা প্রতীক দেখেই ভোট দেবেন।
তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুকুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও গত পাঁচ বছরে বিয়ানীবাজারে তেমন উন্নয়ন হয়নি। মেয়রের কর্মকাণ্ডে কোনো জবাবদিহি ছিল না। ফলে মানুষ তার ওপর ক্ষুব্ধ। মানুষের ক্ষোভ আঁচ করতে পেরেই আমি প্রার্থী হয়েছি।’
নির্বাচিত হলে পৌরবাসীর নাগরিক অধিকার শতভাগ নিশ্চিতকরণ, উন্নয়ন প্রকল্পের সমবণ্টন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবেন বলে জানান ফারুকুল।
নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই প্রচার জমে উঠছে প্রবাসী অধ্যুষিত এই পৌরসভায়। উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। পৌর শহরের অলিগলি থেকে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টারে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। গণসংযোগের পাশাপাশি করছেন উঠান বৈঠকও।
একাধিক ভোটারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমান মেয়রের নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে নৌকা প্রতীক। তবে মেয়র পদে থাকাকালে তার কর্মকাণ্ডে ক্ষোভও আছে। সেই সঙ্গে আছেন বিদ্রোহীরা। এসব সামাল দিতে পারলে আবার হাসতে পারেন শুকুর।আর তাতে ব্যর্থ হলে নতুন কেউ বসতে পারেন মেয়রের চেয়ারে। এ ক্ষেত্রে সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ভোটার। আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের সুবিধা নিতে পারেন তিনি। তফজ্জুল হোসেনের পরিবারের একাধিক সদস্য আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও তিনি নিজে কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন।
তবে আবারও জয়ী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো. আব্দুস শুকুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বিগত পাঁচ বছরে পৌরসভার যে উন্নয়ন করেছি, পৌরবাসী তার মূলায়ন করবে। নৌকা প্রতীক হচ্ছে উন্নয়নের প্রতীক- বিয়ানীবাজারের জনগণ তা জানে। তাই এবারের নির্বাচনেও তারা ভুল করবেন না।’
সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ১৭ বছর পৌরসভা মানুষকে সেবা দিয়ে গেছি। কিন্তু গত পাঁচ বছর প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার পৌরসভায় যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি। পৌরবাসী নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত ছিল। তাই আমি আবার প্রার্থী হয়েছি। জনগণ গত পাঁচ বছরের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। তাই তারা এবার আমাকে নির্বাচিত করবে।’
বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। এ পৌরসভার ২৭ হাজার ৭৯৩ জন ভোটার ১৫ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট দেবেন।’